[Question] আইন ই আকবরী গ্রন্থের রচয়িতা কে?
(ক) | বীরবল |
(খ) | আবুল ফজল |
(গ) | টোডরমল |
(ঘ) | তানসেন |
সংক্ষেপে ব্যাখ্যাঃ
আইন ই আকবরী গ্রন্থের রচয়িতা হলেন আবুল ফজল ৷
আইন-ই-আকবরী আবুল ফজল আল্লামীর আকবরনামা গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ড। মুসলিম ইতিহাস গ্রন্থমালার মধ্যে সবচেয়ে প্রামাণ্য গ্রন্থ এটি। আকবরনামার প্রথম খণ্ডে রয়েছে রাজা তইমুর, সুর এবং বাবর আমলের বিস্তারিত ইতিহাস। দ্বিতীয় খণ্ডে সম্রাট আকবরের ছেচল্লিশ বছর রাজত্বের ইতিহাস এবং তৃতীয় খণ্ড অর্থাৎ আইন- ই-আকবরীতে রয়েছে সম্রাট আকবরের রাজত্বসংক্রান্ত নানা তথ্য।
অধিকাংশ ইতিহাসবিদ শাসনব্যবস্থার বর্ণনায় যেখানে যুদ্ধবিদ্রোহ ও বিভিন্ন রাজবংশের কাহিনি সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন, সেখানে আবুল ফজল আল্লামী শাসনব্যবস্থার বর্ণনায় তা করেননি। তিনি সম্রাটের দরবারের সদস্য হিসেবে উপস্থিত থেকে সম্রাটকে যেমন দেখেছেন ঠিক তেমনিভাবে সম্রাটকে তাঁর গ্রন্থে উপস্থাপন করেছেন। ফলে মুসলিম ইতিহাসের অন্যান্য উৎসের প্রতি কৌতূহলী দৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়ার অনেক আগেই আইন-ই-আকবরী গ্রন্থ থেকে সবাই সাহায্য নিয়েছেন। গ্রন্থ হিসেবে আইন-ই-আকবরীর গুরুত্ব তাই অপরিসীম। এ গ্রন্থ থেকে সম্রাট আকবরের শাসনের খুঁটিনাটি বিষয়ও জানা যায়।
লেখক আবুল ফজল আল্লামী
মোগল সম্রাটদের মধ্যে আকবর অনন্য। তাঁর পুরোনাম জালাল উদদিন মহাম্মদ আকবর (১৫৪২-১৬০৫)। আবুল ফজল ছিলেন তাঁর মন্ত্রী এবং ইতিহাস রচয়িতা। আবুল ফজল আকবরের প্রায় সমবয়স্ক ছিলেন (১৫৫১-১৬০২)। তিনি আকবরনামা লিখেছেন। আইন-ই আকবরী আবুল ফজল আল্লামীর আকবরনামা গ্রন্থের একটি খণ্ড। আকবরনামায় আছে শূর বংশের রাজাদের রাজত্বসংক্রান্ত বিষয় এবং সম্রাট বাবরের ইতিহাস ও আকবরের প্রায় ছেচল্লিশ বছরের রাজত্বসংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ।
অপর খণ্ড অর্থাৎ আইন-ই আকবরীতে রয়েছে আকবরের রাজ্যশাসন সংক্রান্ত নানা রাজনীতি ও তথ্য। এই সব তথ্য মোগল ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয় মহামতি আকবরকে জানার জন্য এসব উপকরণ অত্যন্ত সহায়ক। অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মোগল ইতিহাস জানার জন্য যেখানে বর্ণনা করেছেন শাসন-শোষণ, যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি ঘটনার, আবুল ফজল আল্লামী তা করেননি। তিনি ছিলেন সম্রাট আকবরের ঘনিষ্ঠজন। সম্রাটের দরবারে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত থেকে সম্রাটকে যেমনটি দেখেছেন ঠিক তেমনটি সংযত ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। তাঁর এই রচনারীতিই গ্রন্থটিকে মুসলিম ইতিহাস গ্রন্থমালার সবচেয়ে প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মূল গ্রন্থটি ফারসী ভাষায় লিখিত। ইংরেজী অনুবাদ করেন এইচ ব্লকম্যান। ইংরেজী গ্রন্থটির নির্বাচিত অংশ বাংলায় অনুবাদ করেছেন আহমদ ফজলুর রহমান। তিনি কাজটি করেছেন প্রায় তিন দশক আগে। নানা কারণে গ্রন্থটি প্রকাশে বিলম্ব ঘটেছে। অনুবাদক লোকান্তরিত হওয়ায় ও সময়ের দীর্ঘ ব্যবধানের কারণে অনুবাদের মান উন্নয়ন সম্ভবপর হয়নি। তবে ঐতিহাসিক তথ্যের গুরুত্ব তেমন কমেনি। সেই প্রয়োজন থেকেই বাংলা একাডেমী গ্রন্থটি প্রকাশের ব্যবস্থা নিয়েছে। মুদ্রণ প্রমাদ সর্বাংশে পরিহার করা সম্ভব হয়নি।
Also Read More:—