মেঘদূত গ্রন্থের রচয়িতা কে ছিলেন? [MCQ]

[Question] মেঘদূত গ্রন্থের রচয়িতা কে ছিলেন?

(ক)কালিদাস
(খ)কলহন
(গ)সন্ধ্যাকর নন্দী
(ঘ)কৌটিলা

উত্তরঃ (ক) কালিদাস


সংক্ষেপে ব্যাখ্যাঃ

মেঘদূত গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন কালিদাস ৷

ভূমিকা: সংস্কৃত কবিতা ও ‘মেঘদূত’

সংস্কৃত কবিতার সঙ্গে আজকের দিনে আমাদের বিচ্ছেদ ঘটেছে। সেই বিচ্ছেদ দুস্তর না হোক, সুস্পষ্ট। আর তার কারণ শুধু এই নয় যে সংস্কৃত ব্যাকরণের চর্চা আমরা করি না। চর্চা করি না এ-কথা সত্য কিনা তাও সন্দেহ করা যেতে পারে। ইংরেজ আমলে সংস্কৃত শিক্ষার মর্যাদাহাস, আধুনিক যন্ত্রযুগে সংস্কৃত বিদ্যার আর্থিক মূল্যের অবনতি, কর্মক্ষেত্রে ও সামাজিক জীবনে সংস্কৃতের ক্ষীয়মাণ প্রয়োজন এই সব নৈরাশ্যকর তথ্য সত্ত্বেও আমাদের মধ্যে অনেকেই সংস্কৃত ভাষার চর্চা ক’রে থাকেন; যাঁরা নামত এবং প্রকৃতপক্ষে পণ্ডিত, তাঁদের সংখ্যাও খুব কম নয়। এমন নয় যে দেশসুদ্ধ সবাই সংস্কৃত ভুলে গেছে, স্কুলে-কলেজে তা পড়ানো হয় না, কিংবা আধুনিক বাংলার সঙ্গে সংস্কৃতের কোনো যোগ নেই।

বরং আধুনিক বাংলা ভাষায় দেশজ শব্দের বদলে তৎসম ও তদ্ভবের প্রচার বেড়েছে (তথাকতিত বীরবলী ভাষাও এর ব্যতিক্রম নয়), এবং রবীন্দ্রনাথ, যিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রতিষ্ঠাতা, তাঁর বিরাট মূলধনের বৃহত্তম অংশটিও সংস্কৃত থেকে আহৃত। অথচ, যাঁরা রবীন্দ্রনাথ পড়েন, তাঁদের মধ্যে হাজারে একজনও কোনো সংস্কৃত কাব্যের পাতা ওল্টান কিনা সন্দেহ। যে-সব শিক্ষাপ্রাপ্ত বা শিক্ষালাভেচ্ছু বাঙালি ‘হ্যামলেট’ প’ড়ে থাকেন, বা গ্যেটের ‘ফাউস্ট’ বা, এমনকি, ‘রাজা অয়দিপৌস’ অথবা ‘ইনফের্নো’, তাঁদের মধ্যে ক-জন আছেন যাঁদের ‘মেঘদূত’ বা ‘শকুন্তলা’ পড়ার কৌতূহল জাগে, কিংবা যাঁরা ভাবেন যে সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে কিছু পরিচয় না-থাকলে তাঁদের শিক্ষা সম্পূর্ণ হ’লো না? মানতেই হয়, তাঁদের সংখ্যা অকিঞ্চিৎকর।

এই অবস্থার জন্য আমাদের অত্যধিক পশ্চিমপ্রীতিকে দোষ দেয়া সহজ, কিন্তু পশ্চিমের প্রতি এই আসক্তি কেন ঘটলো তাও ভেবে দেখা দরকার। আমি এ-উত্তর দেবো না যে সৃষ্টিশীল জীবিত ভাষায় রচিত পশ্চিমী সাহিত্যের আকর্ষণ এত প্রবল যে তার প্রতিযোগে সংস্কৃত দাঁড়াতে পারে না। পশ্চিমের আকর্ষণ নিশ্চয়ই দুর্বার, কিন্তু সংস্কৃত সাহিত্যের কাছে আমাদের যা পাবার আছে তাও মূল্যবান, এবং অন্য কোথাও তা পাওয়া যাবে না। এ-কথা পৃথিবী ভ’রেই সত্য, কিন্তু বিশেষভাবে প্রয়োজ্য ভারতীয়ের পক্ষে যিনি কোনো ভারতীয় ভাষা বা সাহিত্যের চর্চা করেন তাঁর পক্ষে সংস্কৃতের অভাবের কোনো ক্ষতিপূরণ নেই। এই কথাটা তর্কস্থলে মেনে নেবার তেমন বাধা হয় না, কিন্তু কাজে খাটাতে গেলেই বিপদ বাধে।

আসল কথা, আমরা সংস্কৃতের সম্মুখীন হ’লেই ঈষৎ অস্বস্তি বোধ করি, তার সাহিত্য বিষয়ে উৎসাহ জেগে উঠলেও উপযোগী খাদ্য পাই না; যা পাই, তা শুধু তথ্য (তাও তর্কমুখর), নয়তো উচ্ছ্বাস, নয়তো হিন্দু-নামাঙ্কিত এক তুষারীভূত মনোভাব, যা কালের গতিকে অস্বীকার ক’রে নিজের মর্যাদায় স্থবির হ’য়ে আছে। সংস্কৃত সাহিত্যের সাহিত্য হিশেবে, চর্চার পথ তৈরি হয়নি; চলতে গেলেই হুঁচট খেতে হয় ইতিহাসে, ঘুরতে হয় দর্শনের গোলকধাঁধায়, নয়তো ব্যাকরণের গর্তে প’ড়ে হাঁপাতে হয়। আসল কথা, আমাদের সমকালীন জীবনধারার সঙ্গে সংস্কৃত সাহিত্যের কোনো সত্যিকার সম্বন্ধ এখনো স্থাপিত হয়নি।

প্রাচীন ভারত এবং প্রাচীন গ্রীস ও রোম একই জগতের অন্তর্ভূত ছিলো, দুই ভূখণ্ডে কিছু বিনিময় ছিলো না তাও নয়; য়োরোপে খ্রিষ্টীয় সভ্যতার উত্থানের পরে যে- অবরোধ নামে তা রেনেসাঁসের সূচনামাত্রে কেমন ক’রে উত্তোলিত হয় সেই ইতিহাসও পুরাতন কথা। একদিন জগতের হাটে পৌছলো আমাদের ‘পঞ্চতন্ত্র’ স্কুল থেকে আমাদের পরিচিত সেই করটক ও দমনক নামক শৃগালদ্বয়- আর বুদ্ধজীবনী, বৌদ্ধ কাহিনী, ‘কথাসরিৎসাগরে’র অনেকগুলো ছেঁড়াপাতা- পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ য়োরোপের প্রতিটি ভাষায় অনূদিত, অনুলিখিত, ও সম্প্রচারিত হ’লো সেই সম্ভার: সংস্কৃত থেকে ফার্শি, ফার্শি থেকে আরবি, আরবি থেকে তুর্কি, সিরীয়, গ্রীক, লাতিন, ইত্যাদি এমনি ঘুরে-ঘুরে য়োরোপের সাহিত্যে নতুন একটি দিগন্ত খুলে দিলো।

কিন্তু বোকাচ্চো বা চসার জানতেন না তাঁদের অনেক গল্পের আদি উৎস ভারতবর্ষ ও সংস্কৃত ভাষা; আর শেক্সপিয়ার অবশ্য স্বপ্নেও ভাবেননি যে তাঁর ‘দি টেমিং অব দি শ্রু’ নাটকের মুখবন্ধটি একটি প্রাচীন ভারতীয় কথিকার সাত-হাত-ফেরতা ভিন্ন প্রকরণ। য়োরোপের ‘আলোকপ্রাপ্তি’র যুগে ফ্রান্সে ও ইংলণ্ডে যে-‘প্রাচ্য’ কাহিনীরচনার ধুম প’ড়ে যায় যাতে নেতৃত্ব করেন ভলতেযার, মঁতেস্কিউ ও স্যামুয়েল জন্সন- তাও ছিলো স্বল্প জ্ঞান স্বচ্ছন্দ কপোলকল্পনায় আশ্রিত। ঘোষিতভাবে সংস্কৃত পুঁথি ও ভারতীয় চিন্তা পশ্চিম দেশে বিকীর্ণ হ’লো এই সেদিন মাত্র, যখন, ভারতে ইংরেজ প্রভুত্বের প্রতিষ্ঠার পর, উইলিয়ম জোন্স ‘শকুন্তলা’ ও ‘মনুসংহিতা’র এবং চার্লস উইলকিন্স ভগবদ্গীতা ও ‘হিতোপদেশে’র প্রথম ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করলেন। একই সময়ে বের্নিয়ে নামে একটি ফরাশি, ভাগ্যশিকারে ভারতে এসে, য়োরোপে নিয়ে গেলেন একগুচ্ছ উপনিষদের ফার্শি অনুবাদ, যার সম্পাদনা করেছিলেন শাজাহান-পুত্র দারা শুকো।

সেই ফার্শি থেকে, লাতিন, গ্রীক ও ফরাশি মেশানো এক অদ্ভুত ভাষায়, ১৮০১ সালে দ্যুপের যে-অনুবাদ প্রকাশ করেন, সেটি প’ড়েই শোপেনহাওয়ার বলেছিলেন যে ‘উপানিখাৎ’ তাঁর ‘জীবনব্যাপী সান্ত্বনা ও মৃত্যুকালীন শান্তি’। কিন্তু তৎকালীন পাশ্চাত্ত্য সমাজে সংশয় জেগেছিলো সংস্কৃত নামে কোনো ভাষা সত্যি আছে কিনা; কোনো-কোনো সাম্রাজ্যদাম্ভিক মহোদয় ধ’রে নিয়েছিলেন সেটা ব্রাহ্মণদের জালিয়াতি। অনতিপরেই যখন প্রমাণ হ’লো যে সংস্কৃত ভাষার অস্তিত্ব আছে, এবং তাতে বিরাট একটি সাহিত্যও বিদ্যমান, আর প্রাচীন পারসিক, গ্রীক ও লাতিনের তা আত্মীয়, তখন সারা য়োরোপে-জার্মানি, ফ্রান্স, ইংলণ্ড, হল্যান্ড, ইতালিতে-দেখা দিতে লাগলেন সংস্কৃতজ্ঞ ভারতবিদ্বানের দল, বহু সংস্কৃত পুঁথি অনূদিত ও মুদ্রিত হ’লো, এবং আমরা, য়োরোপের – হাত থেকে, আমাদেরই সংস্কৃত বিদ্যা ফিরে পেলাম।

অর্থাৎ, আধুনিক ভারতে সংস্কৃত চর্চা একটি বিলেতফেরৎ সামগ্রী, ভারতের তুলো বা পাট নিয়ে শ্বেতাঙ্গরা যেমন বিবিধ প্রস্তুত পণ্যের আকারে ভারতের হাটেই চালিয়েছে, তেমনি তাদের বুদ্ধির প্রক্রিয়ায় সংস্কৃত বিদ্যাও রূপান্তরিত হ’লো নানা রকম ব্যবহারযোগ্য বিজ্ঞানে। সংস্কৃত ভাষার আবিষ্কারের ফলে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করলেন পশ্চিমী পণ্ডিতেরা ‘আর্য’ বা ‘ইন্দো-য়োরোপীয়’ বংশাবলির সন্ধান পেয়ে ইতিহাসের মূল ধারণা বদলে দিলেন; প্রত্নতত্ত্বের নতুন দ্বার খুলে গেলো; এবং ধর্মতত্ত্বে গবেষণার ক্ষেত্র তিব্বত, বর্মা, মহাচীন অতিক্রম ক’রে জাপানের দিগন্তসীমায় প্রসারিত হ’লো। এই আকারেই য়োরোপের হাতে সংস্কৃত বিদ্যা ফিরে পেয়েছি আমরা ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্বের আকারে; এবং নিজেরা যেটুকু কাজ করতে সচেষ্ট হয়েছি তাও এই সব ক্ষেত্রে- ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, বা ধর্মতত্ত্বে।..[বই থেকে]

পরিশেষে, মেঘদূত গ্রন্থের রচয়িতা হলো মহাকবি কালিদাস ৷

রিপোর্ট করুন

“আমরা(Priobd.com) সকল তথ্য সঠিক দেওয়ার জন্য সর্বদা চেষ্ঠা করেছি ৷ আপনার যদি মনে হয় এই আর্টিকেলে কোনো তথ্য ভুল হয়েছে, দয়া করে প্রশ্নসহ যে অংশটি ভুল হয়েছে তা উল্লেখ করে আমাদের জিমেল করুণ”
Gmail: [email protected]

5/5(3 votes)
Scroll to Top