[Question] শকুন্তলার অনুবাদক কে?
(ক) | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
(খ) | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
(গ) | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর |
(ঘ) | মোহিতলাল মজুমদার |
Explanation: শকুন্তলার অনুবাদক হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ৷
শকুন্তলার মূল গল্পটি প্রাচীন ভারতীয় নাট্যকার কালিদাসের লেখা, যিনি ৪র্থ বা ৫ম শতাব্দীতে সংস্কৃত নাটক “অভিজ্ঞানসকুন্তলম” (সাধারণত “শকুন্তলা” নামে পরিচিত) রচনা করেছিলেন। কালিদাসের এই গ্রন্থকে ধ্রুপদী সংস্কৃত সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অন্যদিকে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন উনিশ(১৯) শতকের একজন বিখ্যাত বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ৷ তিনি “শকুন্তলা” নাটকটি বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের অনুবাদকৃত গল্পটি বাংলার বৃহত্তর শ্রোতাদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে ৷
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিবর্তনের ইতিহাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০- ১৮৯১) এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। পান্ডিত্যের গভীরতায়, মানসিকতার উদারতায়, সমাজসংস্কারের তৎপরতায় তাঁর যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে তা এদেশের সমাজ-সংস্কৃতির ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রাহ্য। বাংলা গদ্যের মধ্যে ছন্দবোধ ও সুশৃঙ্খল ব্যবহারিক পরিবেশ আবিষ্কার করে তিনি ভাষাকে নবরূপে গড়ে তুলেছিলেন। এছাড়া বাংলা প্রবাদ প্রবচনের সুষ্ঠু সুন্দর ব্যবহার করে প্রাথমিক যুগের গদ্যকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। এ জন্যে তাঁকে বলা হয় বাংলা গদ্যের জনক।
আধুনিক বাংলা গদ্যের যাত্রা শুরু হয়েছিল উনিশ শতকের সূচনায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজকে কেন্দ্র করে। এ পর্যায়ের দুর্বল গদ্যকে যথেষ্ট প্রাণবন্ত করে তোলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। স্কুলপাঠ্য, মৌলিক, অনুবাদ মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা কম নয়। তাঁর গ্রন্থগুলোর মধ্যে বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭), বাঙ্গালার ইতিহাস (১৮৪৮), জীবন চরিত (১৮৪৯), বোধোদয় (১৮৫১), ঋজুপাঠ (১৮৫১), সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৩), শকুন্তলা (১৮৫৪), বিধবা বিবাহ প্রচালিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৫), বর্ণ পরিচয় (১৮৫৫), কথামালা (১৮৫৬), মহাভারত (১৮৬০), সীতার বনবাস (১৮৬০), আখ্যানমঞ্জরী (১৮৬৩), শব্দমঞ্জরী (১৮৬৪), ভ্রান্তিবিলাস (১৮৬৯), বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৭১), প্রভাবতী সম্ভাষণ (১৮৬৪), ব্রজবিলাস (১৮৮৪), বিদ্যাসাগর চরিত্র (১৮৯১) উল্লেখযোগ্য।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অধিকাংশ রচনা অনুবাদমূলক। সংস্কৃত, ইংরেজি ও হিন্দুস্থানী থেকে স্বাধীনভাবে ভাষান্তর। ১৮৪৭ থেকে ১৮৯১ সাল প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে তিনি অনেক গ্রন্থের অনুবাদ করেছেন। তাঁর অনুবাদ-গ্রন্থ মৌলিক সাহিত্যের মতো একপ্রকার নতুন সৃষ্টি। এসব গ্রন্থের ‘শকুন্তলা’ (১৮৫৪) উল্লেখযোগ্য। এটি সংস্কৃত মহাকবি কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’ পাঠকের স্বচ্ছন্দ গদ্যানুবাদ। এর অনুবাদের ভাষা বেশ আকর্ষণীয়। যেমন “অনসূয়া ও প্রিয়ংবদা, অঙ্গুরীয় রাজকীয় নামাক্ষরে অঙ্কিত দেখিয়া, চকিত হইয়া, পরস্পর মুখনিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। অঙ্গুরীয়ে দুষ্মন্ত নাম মুদ্রিত আছে, অর্পণ-সময়ে রাজার তাহা মনে ছিল না। এক্ষণে, তিনি আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা দর্শনে, সাবধান হইয়া কহিলেন, রাজকীয় নামাক্ষর দেখিয়া তোমরা অন্যথা ভাবিও না। আমি রাজপুরুষ; রাজা আমায়, প্রসাদচিহ্ন-স্বরূপ, এই স্বনামাঙ্কিত অঙ্গুরীয়া পুরস্কার দিয়াছেন। প্রিয়ংবদা রাজার ছল বুঝিতে পারিয়া, সহাস্য বদনে কহিলেন, মহাশয়! তবে এই অঙ্গুরীয় অঙ্গুলিবিযুক্ত করা কর্তব্য নহে; আপনকার কথাতেই ইনি ঋণে মুক্ত হইলেন; পরে ঈষৎ হাসিয়া, শকুন্তলার দিকে চাহিয়া কহিলেন, সখি শকুন্তলে! এই মহাশয়, অথবা মহারাজ, তোমায় ঋণে মুক্ত করিলেন, এক্ষণে, ইচ্ছা হয়, যাও।”
বিদ্যাসাগরের সাহিত্যকীর্তি সৃজিত হয়েছে অনুবাদের মাধ্যমেই। তাঁর পরিচিতি, খ্যাতি এবং সাহিত্য প্রতিভার মূলে ছিল তার অনুবাদ দক্ষতা। তবে একথাও সত্য, তিনি আক্ষরিকভাবে মূলনুবাদ করেননি, ভাবানুবাদ করেছেন। ‘শকুন্তলা’ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কালিদাসের ‘শকুন্তলা’ হচ্ছে নাটক, আর বিদ্যাসাগর তাকে গদ্যের আঙ্গিকে রূপান্তর করেছেন। অনুবাদ হলেও এই রচনায় মৌলিক শিল্পী বিদ্যাসাগরকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। ‘শকুন্তলা’ গ্রন্থের প্রধান পুরুষ চরিত্র রাজা দুষ্মন্ত আর প্রধান নারী চরিত্র শকুন্তলা। আর আছে শকুন্তলার দুই সহচরী অনসূয়া এবং প্রিয়ংবদা। রাজা দুষ্মন্ত হরিণ শিকারে গিয়ে তপোবনে শকুন্তলা ও তার সহচরীদের সাক্ষাৎ পান। তারা সবাই আশ্রমের বাসিন্দা। শকুন্তলার সাথে রাজার বিয়ে হয় এবং রাজা দেশে ফিরে গিয়ে শকুন্তলাকে ভুলে যান। লেখকের ভাষায়, “রাজা দুষ্মন্ত প্রস্থান করিলে পর, একদিন অনসূয়া প্রিয়ংবদাকে কহিতে লাগিলেন, সখি! শকুন্তলা গান্ধর্ব বিধানে আপন অনুরূপ পতি পাইয়াছে বটে; কিন্তু আমায় এই ভাবনা হইতেছে, পাছে রাজা নগরে গিয়া অন্তঃপুরবাসিনীদিগের সমাত্তামে শকুন্তলাকে ভুলিয়া যান।”
‘শকুন্তলা’ ছাড়াও বিদ্যাসাগরের আরো কয়েকটি অনুবাদ রচনা রয়েছে। ১৮৪৭ সালের আগেই তিনি ভাগবতের কৃষ্ণলীলা অবলম্বনে ‘বাসুদেব চরিত’ লিখেছিলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় এ বই মুদ্রিত হয়নি, এর পাণ্ডুলিপিও পাওয়া যায়নি। ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ হিন্দি ভাষায় রচিত ‘বৈতাল পচ্চীসী’ গ্রন্থের অনুবাদ। তখন বিদ্যাসাগর হিন্দি ভাষা শিখছিলেন এবং সেই ভাষাজ্ঞানের পরীক্ষা করেছেন এই অনুবাদে। ‘সীতার বনবাস’ ভবভূতির ‘উত্তরচরিত’ এবং বাল্মীকির রামায়ণের উত্তর কান্ডের আখ্যানের অনুসরণ, ‘ভ্রান্তিবিলাস’ শেক্স্পীয়রের Comedy of Errors. নাটকের গদ্যানুবাদ-অবশ্য শেকস্পীয়রীয় বিদেশি কাহিনিটিকে দেশীয় পরিচ্ছদ দেবার জন্যে নাটকের পাত্রপাত্রীর নাম ধাম পালটে এদেশীয় নাম দিয়েছেন। ফলে বিদেশি কাহিনি একেবারে এদেশি রূপ ধারণ করেছে। এগুলো হলো বিশুদ্ধ সাহিত্যগ্রন্থের অনুবাদ। কাব্য বা নাটকের অনুবাদে তিনি গদ্য আখ্যানের রীতি গ্রহণ করেছেন। ফলে এগুলোতে একপ্রকার নতুন স্বাদ সঞ্চারিত হয়েছে। কালিদাসের সংস্কৃত নাটক ‘শকুন্তলা’ তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
‘শকুন্তলা’ গ্রন্থে বিদ্যাসাগর সর্বপ্রথম ‘কমা’ চিহ্ন সার্থকভাবে ব্যবহার করেন। বিদ্যাসাগরের রচনাশৈলী সম্পর্কে ধ্বনিতত্ত্ববিদ মুহম্মদ আবদুল হাই বলেন, “বিদ্যাসাগরের অন্যতম প্রধান কীর্তি বাংলা ভাষা। তাঁর হাতেই বাংলা ভাষা সাহিত্য রসমন্ডিত হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে বিদ্যাসাগরের একক প্রচেষ্টাই বাংলা গদ্যকে সাবলীল গতিভঙ্গি ও অমেয় ব্যঞ্জনা দান করেছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সম্পর্কে ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অনুবাদ-গ্রন্থগুলি যথার্থ মৌলিক গ্রন্থের মতো মর্যাদা পেয়েছে-কোনো কোনোটি প্রায় ক্লাসিক সাহিত্যের পর্যায়ে উঠে গেছে। তিনি জানতেন, অনুবাদ ভিন্ন অতি দ্রুত গদ্যভাষা ও সাহিত্যের উন্নতি করা যায় না। সেই জন্য নিছক রসচর্চা ছেড়ে দিয়ে সারস্বত প্রতিভাকে তিনি অনুবাদকর্মে নিয়োগ করেছিলেন। সাহিত্য গ্রন্থগুলির অনুবাদ স্বাভাবিক, সরস ও মূলানুগ হয়েছে-বলতে গেলে গদ্যানুবাদে তাঁর মতো কৃতিত্বে বাংলা সাহিত্যে অতি অল্প অনুবাদকই দেখতে পেরেছেন।” বিদ্যাসাগরের ‘শকুন্তলা’ অনুবাদগ্রন্থ হয়েও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে ক্লাসিক সাহিত্যের মর্যাদায় সার্থকতা লাভ করেছে।
-
শকুন্তলা উপন্যাস কার লেখা?
উত্তরঃ শকুন্তলা উপন্যাস ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর লেখা ৷
-
শকুন্তলার পিতার নাম কি?
উত্তরঃ শকুন্তলার পিতার নাম বিশ্বামিত্র। তিনি প্রাচীন ভারতীয় পুরাণে একজন ঋষি ছিলেন।
-
শকুন্তলা কে ছিলেন?
উত্তরঃ শকুন্তলা হল প্রাচীন ভারতীয় পুরাণের একটি চরিত্র ৷ বিশেষ করে প্রখ্যাত নাট্যকার কালিদাসের লেখা সংস্কৃত নাটক “অভিজ্ঞানসকুন্তলম” থেকে নেওয়া ৷ তিনি ছিলেন হিন্দু পুরাণে বর্ণিত দুষ্মন্তের স্ত্রী ও সম্রাট ভরতের মা। তিনি ছিলেন খুবুই সুন্দরী এবং গুণী যুবতী ৷ তিনি বনে বেড়ে উঠেন এবং বনে শিকার অভিযানের সময় রাজা দুষ্যন্তের প্রেমে পড়েন। তাদের প্রেম একসময় বিয়ে পর্যন্ত হয়ে যায় ৷
-
শকুন্তলার মাতার নাম কি?
উত্তরঃ শকুন্তলার মাতার নাম মেনকা, যিনি একজন স্বর্গীয় জলপরী বা অপ্সরা এবং ঋষি বিশ্বামিত্রের স্ত্রী ৷
-
শকুন্তলার স্বামীর নাম কি?
শকুন্তলার স্বামীর নাম রাজা দুষ্যন্ত। তিনি প্রাচীন ভারতীয় পুরাণে একজন কিংবদন্তি রাজা ছিলেন এবং কালিদাসের সংস্কৃত নাটক “অভিজ্ঞানসকুন্তলম”-এ শকুন্তলার গল্পে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন।
-
শকুন্তলার পালক পিতার নাম কি?
উত্তরঃ শকুন্তলার পালক পিতার নাম ঋষি কণ্ব। ঋষি কণ্ব শকুন্তলাকে শিশু অবস্থায় পেয়ে বনে তার আশ্রমে লালন-পালন করেন। ঋষি কণ্বকে গল্পে একজন জ্ঞানী এবং করুণাময় ব্যক্তিত্ব হিসাবে দেখা যায়, যিনি শকুন্তলার বেড়ে উঠা পর্যন্ত যত্ন নেন এবং তাকে একটি প্রেমময় লালনপালন প্রদান করেন।
-
শকুন্তলাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন কে?
উত্তরঃ শকুন্তলাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন ঋষি দূর্বাসা ৷
-
শকুন্তলার পুত্রের নাম কি?
উত্তরঃ শকুন্তলার ছেলের নাম ভরত। তিনি ভারতীয় পুরাণে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন, কারণ তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে রাজত্বকারী রাজবংশের একমাত্র পূর্বপুরুষ বলে মনে করা হয়, যা ভারত রাজবংশ নামেও পরিচিত।
Related Questions: