ভরপুরে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার রাখুন আপনার খাদ্য তালিকায়

5/5(1 vote)

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারঃ ভিটামিন ডি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টিউপাদান ৷ এটি দেহের ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ করে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ৷ হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে ভূমিকা রাখে ৷ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখে ৷ পেশী ফাংশন এং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ৷ এর অভাবে শিশুদের রিকেট এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওম্যালাসিয়ার মতো সমস্যা তৈরি হয় ৷

তাই ভিটামিন ডি মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৷ আপনি বিভিন্ন উপায় ভিটিমিন ডি এর ঘাটতি পূরন করতে পারেন ৷ দৈনিক খাদ্যতালিকিয় ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন ৷

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার

ভিটামিন ডি এর উৎস

ভিটামিন ডি দেহের সামগ্রিক স্বাস্থের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদিন ৷ এটি দেহের ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণে ভূমিকা রাখে ৷ হাড় ও পেশি মজবুতে ভিটামিন ডি খুবুই প্রয়োজন ৷ শিশুদের রিকেট এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওম্যালাসিয়ার মতো সমস্যা প্রতিরোধে এটি কাজ করে ৷

এখন কথা হলো এই গুরুত্ত্বপূর্ণ ভিটামিন ডি এর উৎস কি বা কোথায় থেকে আমরা ভিটামিন ডি পেতে পারি ৷ ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস হলো সূর্যের আলো এবং খাবারের মাধ্যমে ৷ আসুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি,

সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি

প্রাকৃতিকভাবে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসলে আমাদের দেহে ভিটামিন ডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হতে থাকে ৷ আসলে আমরা সরাসরি সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পাই না ৷ কিন্তু সূর্যের আলো আমাদের ত্বকে সরাসরি পরলে সেখানে ভিটামিন ডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় ৷

আমাদের ত্বকে থাকে এক ধরনের কোলেস্টেরল ৷ সূর্যের আলোর অতি বেগুনি রশ্মি(UVB) ত্বকে পরলে তা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোলেস্টেরল থেকে প্রিভিটামিন D3, পরে ভিটামিন D3, তারপর ভিটামিন ডি তে রুপান্তরিত হয় ৷

আমরা অনেকেই আছি যারা ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার হাতের কাছে না থাকার কারণে এই পুষ্টি উপাদানটি দেহে নিতে পারি না ৷ আমরা ইচ্ছা করলে সপ্তাহে কয়েকদিন ১০-২০ মিনিটের জন্য রোদে আসলে প্রাকৃতিকভাবে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পেতে পারি ৷

খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন ডি

সূর্যের আলো সব জায়গায় নাও থাকতে পারে ৷ সেক্ষেত্রে আমাদের খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরন করতে হবে ৷ ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি অর্থাৎ কোন কোন খাবারে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় নিচে আলোচনা করা হলো ৷

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার

01. চর্বিযুক্ত মাছ

চর্বিযুক্ত মাছ ভিটামিন ডি এর সবচেয়ে ভালো উৎস ৷ এদের মধ্যে রয়েছে স্যামন, ম্যাকেরেল এবং সার্ডিন জাতীয় মাছ ৷ তবে বাংলাদেশে পাওয়া যায় ভিটামিন ডি এর সবচেয়ে ভালো উৎস হলো ইলিশ মাছ, রুই মাছ, পমফ্রেট মাছ ৷ এসকল মাছ খাওয়ার মাধ্যমে সহজে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরন করতে পারেন ৷ মাছে ভিটামিন ডি এর উপাদান প্রধানত ভিটামিন ডি 3 আকারে থাকে, যা cholecalciferol নামেও পরিচিত। এসকল মাছে শুধু ভিটামিন ডি রয়েছে তাই নয় রয়েছে ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিডও, যা হৃদরোগের জন্য উপকারী।

02. ডিমের কুসুম

ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরনে ডিমকে খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বিশেষ করে ডিমের কুসুম ৷ ডিমের কুসুম ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস ৷ NCBI সাইটে প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিশ্চিত করে যে ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিনের পাশাপাশি ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। এ কারণে দেহে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরনে ডিম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এটি খেলে শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ হয়।

03. দুধ

দুধ ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস ৷ যারা দুধ খেতে পছন্দ করেন, তারা দুধের মাধ্যমে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরন করতে পারেন ৷ সাধারনত দুধে ভিটামিন ডি 3 আকারে পাওয়া যায় ৷ দুধ একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার ৷ ভিটামিন ডি ছাড়াও দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি 12, রিবোফ্লাভিন ইত্যাদি ৷

04. কমলার রস

ভিটামিন ডি এর জন্য কমলার রস খেতে পারেন ৷ এতে সামান্য পরিমান ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ হতে পারে ৷ আপনি সূর্যের আলোতে থাকার পাশাপাশি এবং উল্লেখিত খাবারগুলোর সাথে মাঝে মাঝে কমলার রস খেতে পারেন ৷ এতে করে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি কিছুটা পূরন হবে ৷

05. মাশরুম

মাশরুমে ভিটামিন ডি রয়েছে ৷ তবে সব মাশরুম নয় ৷ যেসকল মাশরুম সূর্যের আলোতে বড় হয়েছে সেখানে ভিটামিন ডি বেশি থাকে ৷ বাংলাদেশে সবজায়গায় এখনও মাশরুম পাওয়া যায় না ৷ মাশরুম খাওয়ার প্রচলন এখনও সব জায়গায় নেই ৷ কিন্তু মাশরুমে পুষ্টি গুণাগুণ রয়েছে ৷ মাশরুমে ভিটামিন বি, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম রয়েছে ৷ তাই আপনার খাদ্য তালিকায় মাশরুম অন্তভূর্ক্ত করতে পারেন ৷

06. দুগ্ধজাত খাবার

কিছু দুগ্ধজাত খাবারে ভিটামিন ডি রয়েছে ৷ যেমন গরুর দুধ, দই, পনির ইত্যাদি ৷ গরুর দুধের সাথে বাদাম, সয়া, বা ওট মিল্ক একসাথে মিশ্রিত করে খেলে ভিটামিন ডি এর চাহিদা অনেকাংশ পূরন হয় ৷ সুতরাং ভিটামিন ডি এর জন্য দই, পনির ইত্যাদি দুগ্ধজাত খাবারগুলো খেতে পারেন ৷

ভিটামিন ডি যুক্ত শাকসবজি

শাকসবজি প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এটি অস্বীকার করা যায় না ৷ এতে রয়েছে ভিটামিন(এ, সি, কে, ফোলেট), খনিজ পদার্থ(পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন), রয়েছে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি ৷ কিন্তু শাকসবজিতে ভিটামিন ডি এর পরিমান খুবুই কম ৷ শাকসবজির উপর নির্ভর করে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পুরন করা সম্ভব নয় ৷ তবে শাকসবজির মধ্যে একমাত্র সূর্যের আলোতে বড় হওয়া মাশরুমে ভিটামিন ডি রয়েছে ৷ তাই ভিটামিন ডি এর জন্য মাশরুম খাদ্য তালিকার রাখতে পারেন ৷ কিছু পরিমান ভিটামিন ডি সরিষার শাক, পালং শাক, বাঁধাকপিতে পেতে পারেন ৷

ভিটামিন ডি যুক্ত ফলের নাম

আমরা চাই যে ফল খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরন করতে ৷ কিন্তু আপনি যেনে আশ্চর্য হবেন যে ফলমূল এবং শাকসবজি ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস নয় ৷ আপনি ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরন করতে পারবেন না ৷ কিন্তু ফলে ভিটামিন ডি এর পরিমান কম থাকলেও অন্যান্য পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ ৷ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার আমরা ফল খাওয়ার মাধ্যমে পেয়ে থাকি ৷ তবে ভিটামিন ডি এর জন্য ফলের উপর নির্ভর করা যাবেনা ৷ আপনি ইচ্ছা করলে কমলার রস খেতে পারেন, যেখানে কিছু পরিমানে ভিটামিন ডি রয়েছে ৷

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের তালিকা

  • চর্বিযুক্ত মাছ: সালমন, ম্যাকেরেল, সার্ডিনস, ইলিশ, রুই ইত্যাদি।
  • কড মাছের কলিজার তেল ৷
  • ডিমের কুসুম ৷
  • ফোর্টিফাইড মিল্ক।
  • ফোর্টিফাইড অরেঞ্জ জুস।
  • গরুর দুধ ৷
  • দই ও পনির ৷
  • গরুর লিভার ৷
  • মাশরুম ৷
  • চিংড়ি, ঝিনুক, কাঁকড়া ইত্যাদি ৷
  • সূর্যমুখী বীজ
  • বাদাম দুধ, সয়া মিল্ক
  • সরিষার শাক, পালং শাক, বাঁধাকপি
  • মসুর ডাল

Disclaimer: এই আর্টিকেল শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং একটি ধারনা নেওয়ার জন্য ৷ এটি কখনই দক্ষ চিকিৎসকের বিকল্প হতে পারে না ৷ তাই আপনার খাদ্যতালিকায় নতুন কিছু সংযোজন এবং যেকোনো স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই একজন দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন ৷

  1. ভিটামিন ডি এর প্রাকৃতিক উৎস কি?

    উত্তরঃ ভিটামিন ডি এর প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে রয়েছে খাবার এবং সূর্যের আলো ৷ খাবারের মধ্যে রয়েছে চর্বিযুক্ত মাছ যেমন ইলিশ, রুই, সালমন, ম্যাকেরেল এবং সার্ডিন ইত্যাদি ৷ তাছাড়া মাছের লিভারের তেলে রয়েছে ভিটামিন ডি ৷ ডিমের কুসুম, গরুর মাংসের কলিজা এবং সূর্যালোকের সংস্পর্শে বড় হওয়া মাশরুম ভিটামিন ডি-এর ভালো উৎস। পনির, দই সেইসাথে দুধ, কমলার রস ইত্যাদিতে রয়েছে কিছু পরিমান ভিটামিন ডি ৷ তাছাড়া ভিটামিন ডি বৃদ্ধিতে অবদান রাখে চিংড়ি, কাঁকড়া এবং ঝিনুকের মতো সামুদ্রিক খাবারেও ৷

  2. ফলের মধ্যে কি ভিটামিন ডি পাওয়া যায়?

    ভিটামিন ডি ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমানে থাকে না ৷ থাকলেও খুবুই সামান্য ৷ ভিটামিন ডি এর প্রধান এবং প্রাকৃতিক উৎসই হলো সূর্যের আলো এবং কিছু সামুদ্রিক মাছ ৷ কিছু মাশরুম রয়েছে যারা সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসলে ভিটামিন ডি সংশ্লেষিত করতে পারে। তবে মাশরুম ফল নয় ৷ কমলার রসে সামান্য পরিমান ভিটামিন ডি রয়েছে ৷

  3. কোন শাকসবজি গুলোতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়?

    এটা মনে রাখা দরকার যে, শাকসবজি দেহের বিভিন্ন পুষ্টি সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷ কিন্তু ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস হিসেবে শাকসবজি নয়, তবে কিছু শাকসবজিতে সামান্য পরিমানে থাকতে পারে ৷ যেমন পালং শাক এবং সরিষার শাক ইত্যাদি ৷ সূর্যের আলোতে বড় হওয়া কিছু মাশরুমে ভিটামিন ডি থাকতে পারে ৷ তবে ভিটামিন ডি ভালো রয়েছে ফ্যাটি মাছ, ডিম এবং সামুদ্রিক খাবারে ৷

  4. বাদামে কি ভিটামিন ডি পাওয়া যায়?

    উত্তরঃ বাদামে ভিটামিন ডি এর উপাদান থাকলেও খুবুই সামান্য ৷ বাদামের উপর নির্ভর করে ভিটামিন ডি পাওয়া সম্ভব নয় ৷ পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ডি এর জন্য সূর্যের আলো কিছু সময় দেওয়া, চর্বিযুক্ত মাছ(ইলিশ,রুই), ডিমের কুসুম, কলিজার তেল ইত্যাদি খাওয়া ৷

  5. মাংসে ভিটামিন ডি কি পরিমানে থাকে?

    উত্তরঃ হ্যা, মাংসে ভিটামিন ডি বিভিন্ন পরিমানে রয়েছে ৷ চর্বিযুক্ত মাছ এবং মাছের যকৃতের তেল ভিটামিন ডি এর উৎকৃষ্ট উৎস ৷ গরুর মাংস, কলিজাতে পরিমিত পরিমানে ভিটামিন ডি রয়েছে ৷ মুরগির উরুতে ভিটামিন ডি রয়েছে ৷

  6. দুগ্ধজাত পন্যে ভিটামিন ভিটামিন ডি থাকে?

    উত্তরঃ হ্যাঁ, কিছু দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দই এবং পনিরে ভিটামিন ডি থাকে।

  7. মাশরুমে কি ভিটামিন ডি আছে?

    উত্তরঃ হ্যা, সূর্যের আলোতে মাশরুম ভিটামিন ডি সংশ্লেষিত করতে পারে ৷ তাই কিছু মাশরুমে ভিটামিন ডি থাকতে পারে ৷

  8. কোন সামুদ্রিক খাবারে ভিটামিন ডি বেশি থাকে?

    উত্তরঃ চর্বিযুক্ত মাছ যেমন স্যামন, ম্যাকেরেল এবং সার্ডিন এবং বাংলাদেশে পাওয়া যায় ইলিশ, রুই মাছে ভিটামিন ডি রয়েছে ৷ একইসাথে ঝিনুক, চিংড়ি এবং কাঁকড়াতেও রয়েছে ।