মাথায় খুশকি কেন হয় বিস্তারিত | What Causes Dandruff

What Causes Dandruff | মাথায় খুশকি কেন হয়ঃ খুশকি বিশেষকরে মাথার ত্বকে হয়ে থাকে, যা অনেক চুলকানির কারণ হতে পারে ৷ শুধু তাই নয় অতিরিক্ত খুশকি চুল পড়ার কারণ হতে পারে ৷ শুষ্ক ও আদ্র আবহাওয়ায় খুশকি বেশি হয় ৷ মাথায় খুশকি হওয়া কিছু কারণ বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন আজকের আর্টিকেলে ৷ আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি এই শীতে আপনাদের জন্য বিশেষ উপকারে আসবে ৷ এরকম স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস পেতে প্রিয়োবিডির সাথেই থাকুন ৷

মাথায় খুশকি কেন হয় বিস্তারিত | What Causes Dandruff

খুশকি কি?

খুশকি হলো মাথার ত্বকে হওয়া ফ্ল্যাকি কণার আকারে মৃত ত্বকের কোষগুলিকে বুঝায় ৷ মাথায় খুশকি চুলকানির সৃষ্টি করে ৷ শীত ও বর্ষাকালে খুশকির পরিমান বেশি দেখা যায় ৷ কারণ তখন মাথা শুষ্ক ও আদ্র থাকে ৷ এমন পরিবেশে খুশকি তৈরি প্রধান ছত্রাক ম্যালাসেজিয়ার আরও বংশবৃদ্ধি করে এবং মাথায় তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক তেল খেয়ে ফেলে ৷ ফলসরুপ ত্বকে তৈরি হয় খুশকি ৷

তাই নিয়মিত মাথার ত্বক পরিষ্কার করা, ময়শ্চারাইজিং শ্যাম্পু ব্যবহার করা, হাইড্রেশন থাকা, সুষম খাবার খাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে খুশকি প্রতিরোধ করা যায় ৷ যদি তাতেও কাজ না হয় তাহলে একজন দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ৷

মাথায় খুশকি কেন হয় বা কারণগুলো কি কি? | What Causes Dandruff

মাথায় খুশকি কেন হয়(What Causes Dandruff) এমন প্রশ্ন অনেকেরই থাকতে পারে ৷ মাথায় খুশকি হওয়া একটি কমন সমস্যা ৷ ছেলে-মেয়ে উভয়েরই মাথায় খুশকি হতে পারে ৷ বিশেষ করে শীত ও বর্ষায় শুষ্ক ও আদ্র আবহাওয়ার কারণে খুশকির প্রকোট একটু বেশি দেখা যায় ৷ তাই খুশকি কেন হয় এটি জানতে পারলে মাথায় খুশকি হওয়া অনেকাংশ কমিয়ে ফেলা সম্ভব হয় ৷ নিচে খুশকি হওয়ার কতগুলো কারণ উল্লেখ করা হলোঃ

ম্যালাসেজিয়া ছত্রাকের কারণে মাথায় খুশকি

‘ম্যালাসেজিয়া’ এক ধরনের ছত্রাক যা মাথার ত্বকে পাওয়া যায় ৷ যা দেখতে অনেকটা খামিরের মতো দেখায় ৷ মাথার ত্বকে এই ম্যালাসেজিয়া ছত্রাকের পরিমান বেড়ে গেলে মাথায় খুশকির পরিমান বাড়তে শুরু করে ৷ আমাদের মাথার ত্বকে উপস্থিত প্রাকৃতিক তেল খেয়ে এরা বেঁচে থাকে এবং উপজাত হিসাবে ওলিক অ্যাসিড ছেড়ে যায়। ৷ ফলে এটি আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে ৷ পরে খুশকি হিসেবে মাথার ত্বকে দেখা যায়, চুলকানির সৃষ্টি হয় ৷

গবেষণায় ম্যালাসেজিয়ার নির্দিষ্ট একটি প্রজাতি(এম. গ্লোবোসাকে) খুশকি তৈরির প্রধান প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যালাসেজিয়া নামক এই ছত্রাক বা ফাঙ্গাসের কারণেই মাথায় খুশকি হয়।

তৈলাক্ত ত্বক খুশকি তৈরি করে

মাথার ত্বকে রয়েছে সেবেসিয়াস গ্রন্থি, যা সেবাম তেল তৈরি করে ৷ যাদের মাথায় এই তেল অত্যধিক পরিমানে উৎপাদিত হয় তাদের মাথায় ছত্রাক ম্যালাসেজিয়া বেশি পরিমানে বৃদ্ধি পায় ৷

যদি আপনার চুল এবং মাথার ত্বক যথাযত পরিষ্কার না হয়, তাহলে সিবাম তেল মৃত ত্বকের কোষ এবং ময়লার সাথে একত্রিত হয়ে চুলকানি তৈরি করতে পারে। শুধু তাই নয় অতিরিক্ত তেল মাথার চুল আঠা করে ফেলে ৷

তাই উৎপাদিত অতিরিক্ত তেল যাতে ছত্রাক বৃদ্ধির কারণ না হতে পারে, তাই আমাদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত এবং যথাযথ শ্যাম্পু করার মাধ্যমে অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে রাখা ৷

মাথায় শুষ্ক ত্বক খুশকি তৈরির কারণ

মাথায় শুষ্ক ত্বক খুশকি তৈরির উপযুক্ত পরিবেশ ৷ বিশেষ করে শীত ও বর্ষাকালে মাথায় অধিক পরিমানে খুশকি দেখা যায় ৷ এর কারণ হলো আর্দ্রতার অভাব ৷ শীত ও বর্ষাকালে ত্বকে আদ্রতা না থাকায় মাথায় মৃত ত্বকের কোষগুলিকে ফ্ল্যাক করে এবং খুশকি হিসেবে ঝরে পড়ে, মাথা চুলকায় ৷ সাধারণত শীতের সময় গরম পানি দিয়ে চুল ধুলে চুল শুষ্ক ও ফ্লেকি হয়ে যায়। তৈলাক্ত খুশকি থেকে শুষ্ক ত্বকের খুশকি আকারে ছোট হয়ে থাকে ৷

তাই আমাদের উচিত মাথার ত্বকের ময়শ্চারাইজ ঠিক রাখা, হাইড্রেটিং রাখা, ডাক্তারি পরামর্শে পরিমিতভাবে শ্যাম্পু ব্যবহার করা, চুলের যত্মের রুটিন তৈরি করা ৷

শ্যাম্পু ব্যবহার না করা খুশকি হওয়ার কারণ

মাথার ত্বকে জমে থাকা মৃত ত্বকের কোষ, তেল এবং ময়লা একত্রে মিশে ছত্রাক ম্যালাসেজিয়া বৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয় ৷ যা খুশকি তৈরি অন্যতম কারণ ৷

তাই মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখার জন্য ডাক্তারি শ্যাম্পু ব্যবহার করা প্রয়োজন ৷ নিয়মিত শ্যাম্পু করা এই জমে থাকা ময়লা ও ম্যালাসেজিয়ার অত্যধিক বৃদ্ধি রোধ করতে পারে এবং মাথার ত্বক ভালো রাখে ৷

বাজারে অনেক রকম শ্যাম্পু পাওয়া যায়, যার অধিকাংশই বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান দ্বারা তৈরি ৷ এগুলোর ত্বকে ব্যবহার ভালোর চেয়ে খারাপ হওয়ার প্রবনতা বেশি থাকে ৷ কিছু শ্যাম্পু এবং অত্যধিক রাসায়নযুক্ত পন্য মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে, যার ফলে শুষ্কতা দেখা দেয়।

তাই যাদের খুশকি অনেক বেশি তারা একজন দক্ষ চিকিৎকরের পরামর্শ অনুসারে প্রয়োজনে অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন ৷

মানসিক চাপ চুলের খুশকির কারণ হতে পারে

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ চুলের খুশকির কারণ হতে পারে ৷ মানসিক চাপ শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে ৷ যার মধ্যে রয়েছে ইমিউন সিস্টেম এবং হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তন ৷ অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের কিছু হরমোন এবং সাইটোকাইনগুলির অতিরিক্ত উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা খুশকি তৈরির পরিবেশ সৃষ্টি করে ৷ তাই সবসময় মন ফ্রেশ রাখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যায়াম করা মানসিক চাপ কমাতে ভূমিকা রাখে ৷

সুষম খাবারের অভাব খুশকির কারণ

কিছু খাবার আছে যা খেলে মাথার ত্বক ভালো থাকে ৷ যেমন জিঙ্ক, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড(ফ্যাটি মাছ এবং ফ্ল্যাক্সসিড), প্রোটিন এবং আয়রন সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য যা মাথার ত্বক এবং চুলকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে ৷ অন্যদিকে, চিনি এবং স্যাচুরেটেড চর্বিযুক্ত খাবারগুলি মাথার ত্বকে খুশকি বাড়িয়ে দিতে পারে ৷ কেননা এসব চর্বিযুক্ত খাবার অতিরিক্ত সক্রিয় সেবেসিয়াস গ্রন্থিতে সেবিস তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, যা ম্যালাসেজিয়া ছত্রাক বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে ৷ তাই একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য বজায় রাখা মাথার ত্বক ভালো ও খুশকি না হওয়ায় অবদান রাখতে পারে ৷

হরমোনের পরিবর্তন খুশকি তৈরির কারণ

দেহে হরমোন পরিবর্তনের ফলে মাথায় খুশকির হ্রাস বৃদ্ধি হতে পারে ৷ বিশেষ করে বয়ঃসন্ধি, গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজের মতো পর্যায়গুলিতে হরমোনের মাত্রার ওঠানামা হতে পারে ৷ বিশেষকরে এন্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে সিবামের অতিরিক্ত উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে ছত্রাক ম্যালাসেজিয়া বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি হতে পারে ৷ তাছাড়াও মানসিক চাপের কারণে একধরনের হরমোন তৈরি হতে পারে, যা ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে ৷ এভাবে হরমোনের পরিবর্তন চুলে খুশকির তৈরি হতে পারে ৷

কিছু অসুখ এবং চিকিৎসা অবস্থা খুশকির জন্য দায়ী

কখনও কখনও কিছু অসুখ খুশকি তৈরির পরিবেশ তৈরি করতে পারে ৷ এর মধ্যে রয়েছে সোরিয়াসিস এবং একজিমা ৷ সোরিয়াসিস এবং একজিমা মাথার ত্বকে খুশকি তৈরি ও ফ্ল্যাকে করে তোলে ৷ আবার স্নায়বিক ব্যাধি, যা স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলিকে সক্রিয় করে তোলে এবং ম্যালাসেজিয়া ছত্রাক বৃদ্ধিতে পরিবেশ তৈরি করে ৷ দুর্বল ইমিনিউ সিস্টেম খুশকি তৈরিতে অবদান রাখে ৷ তাছাড়াও মানসিক চাপ বা ইমিউন ডিজঅর্ডারের মতো বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যা খুশকি তৈরি করতে পারে ৷

মাথায় খুশকি তৈরিতে এলার্জির কারণ

মাথায় খুশকি হওয়ার ক্ষেত্রে অ্যালার্জি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আবহাওয়া পরিবর্তন বা মাথার ত্বক যখন অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসে, তখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতিক্রিয়া হিসেবে মাথার ত্বকে প্রভাবিত হতে পারে ৷ তখন মাথায় খুশকি হতে পারে ৷ তাছাড়া অ্যালার্জেনযুক্ত চুলে ব্যবহৃত কিছু পন্য, সুগন্ধি বা এমনকি পরিবেশগত কারণ মাথার ত্বকের জ্বালা এবং ফ্ল্যাকি করতে পারে ৷

মাথার ত্বকে অ্যালার্জিজনিত ডার্মাটাইটিসযুক্ত ব্যক্তিদের চুলকানি, লালভাব এবং ত্বকের খুশকি হতে পারে ৷ তাই মাথায় অ্যালার্জি জনিত খুশকি দূর করার জন্য হাইপোঅ্যালার্জেনিক চুলের যত্নের পণ্যগুলি বেছে নিতে হবে এবং সর্বদা একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা অ্যালার্জিস্টের সাথে পরামর্শ নিতে হবে ৷

শীতে খুশকি হবার কারন কি?

পরিবেশগত এবং শারীরবৃত্তীয় কারণগুলির ফলে প্রায় শীতে মাথায় খুশকি দেখা যায় ৷ এর কারণ শীতের ঠাণ্ডা, শুষ্ক বাতাস মাথার ত্বকে আর্দ্রতার মাত্রা কমিয়ে দেয়, যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং ফুসকুড়ি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

শীতকালে গরম পানিতে গোসল করলে মাথার ত্বক বেশি শুষ্ক হয়ে যায় ৷ যার কারণে মাথায় খুশকির প্রভাব বেশি থাকে। এ ছাড়া শীতে মাথায় স্কার্ফ ও ক্যাপ পরার কারণে মাথায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায় না, এতে খুশকি বাড়ে যায়।

তাই শীতকালে খুশকির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখা, ময়শ্চারাইজিং শ্যাম্পু ব্যবহার করা এবং মাথায় গরম পানি ব্যবহার না করা ইত্যাদি বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে ৷

বর্ষাকালে খুশকি হওয়ার কারণ কি?

বর্ষাকালেও শীতকালের মতো মাথায় খুশকির প্রকোপ বেড়ে যায়। কারণ এ সময় ভেজা চুলে আর্দ্রতা থাকে এবং এ সময় বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লে চুল আঠালো হয়ে যায় এবং খুশকি বেড়ে যায়। বর্ষাকালে, উষ্ণ এবং আর্দ্রতার কারণে মাথার ত্বকে ছত্রাক ম্যালাসেজিয়ার বিস্তারের জন্য একটি আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। এটি চুলের ফলিকল দ্বারা উৎপাদিত হওয়া প্রাকৃতিকভাবে তেল খেয়ে আরও বেশি বংশবিস্তার করে ৷ ফলে ত্বকের ক্ষতি করে এবং খুশকি তৈরি করে ৷

Disclaimer: এই আর্টিকেল শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং একটি ধারনা নেওয়ার জন্য ৷ এটি কখনই দক্ষ চিকিৎসকের বিকল্প হতে পারে না ৷ তাই মাথার ত্বক বা চুলের খুশকি দূর করার জন্য অবশ্যই একজন দক্ষ চিকিৎসকের সরণাপন্য হবেন ৷

5/5(1 vote)
Scroll to Top