ফ্রিতে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পাওয়ার কার্যকর সময়

সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি আমাদের দেহে কিভাবে তৈরি হয় এবং কোন সময়ের রোদে ভিটামিন ডি থাকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের আর্টিকেলে ৷ ভিটামিন ডি এর ঘাটতি বিভিন্ন ভাবে পূরন করা যেতে পারে ৷ এদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে সূর্যের আলো থেকে তৈরি হয় এবং অন্যটি হলো খাবারের মাধ্যমে ৷ আসুন জেনে নেই এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ৷

সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি

শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন একটি পুষ্টি যা শুধুমাত্র হাড়, দাঁত এবং পেশীকে শক্তিশালী করে না বরং ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো উপাদানগুলিকে শোষণ করতেও সাহায্য করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর থেকে রোগ দূরে রাখে। ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণে আপনি কোমর ব্যথা, ক্লান্তি, দুর্বলতা, বিষণ্নতা, চুল পড়ার মতো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

আমরা প্রায় দেখে থাকি ছোট বাবুদের সকালে হালকা সূর্যের আলোতে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ শুধু বাবুদের ক্ষেত্রেই নয় অনেকেই শীতের সকালে যখন সূর্যের আলো পড়ে তখন রৌদ্রতে রোদ পোহাতে দেখা যায় ৷

এতে আমাদের শরীর সূর্যের আলোতে শীত দূর হয়ে যায় ৷ শীতে রোদ বেশ আরাম লাগে ৷ তবে শুধু কি শীত দূর করার জন্যই আমরা রোদে যাই ৷ শীতে গরম অনুভূতির জন্য আমরা রোদে যাই সেটা সত্য ৷ তবে খুব কম মানুষই আছেন যারা যানেন না যে সূর্যের আলো আমাদের কি উপকারে আসে ৷

সূর্যের অতি বেগুনি রশ্নি আমাদের দেহে ভিটামিন ডি তৈরিতে বিশেষ অবদান রাখে ৷ ভিটামিন ডি এর প্রাকৃতিক প্রধান উৎস সূর্যের আলো, যেখান থেকে ভিটামিন ডি এর চাহিদার অনেকাংশ পূরণ করে থাকি ৷

কিভাবে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি তৈরি হয়?

সূর্যকে ভিটামিন ডি উৎপাদনের এর একটি বড় প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, সরাসরি সূর্য থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় না, বরং সূর্যের আলো শরীরে ভিটামিন ডি তৈরিতে সাহায্য করে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি তৈরির প্রক্রিয়া,,

যখন আপনার ত্বক সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির(UVB) সংস্পর্শে আসে, তখন শরীরে ভিটামিন ডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমাদের ত্বকে থাকে এক ধরনের কোলেস্টেরল, যাকে 7-ডিহাইড্রোকোলেস্টেরল বলা হয় ৷ ত্বকের এই কোলেস্টেরল সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি(UVB) শোষণ করে।

UVB রশ্মি শোষণ করে ত্বকের কোলেস্টেরল প্রিভিটামিন D3-এ রূপান্তরিত হয়। তাপের উপস্থিতিতে এই প্রিভিটামিন D3 একটি প্রাকৃতিক রূপান্তর বা “ফটো কনভার্সন” এর মধ্য দিয়ে যায় ৷ পরবর্তীতে রূপান্তরিত প্রিভিটামিন D3, ভিটামিন D3-তে রূপান্তরিত হয়, যা cholecalciferol নামেও পরিচিত।

পরে ভিটামিন ডি 3 রক্ত প্রবাহে শোষিত হয়ে এবং লিভারে চলে যায় ৷ লিভারে ভিটামিন ডি 3 এখন হাইড্রক্সিলেশনের মাধ্যমে একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভিটামিন D3 কে ক্যালসিডিওলে রূপান্তরিত করে, যা 25-হাইড্রোক্সিভিটামিন ডি নামেও পরিচিত।

সর্বশেষ এটি কিডনিতে চলে যায় এবং ক্যালসিট্রিওল নামক ভিটামিন ডি এর সক্রিয় রূপ নেয়, যা শরীরে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ভিটামিন ডি আপনার শরীর ক্যালসিয়াম শোষণ এবং হাড়ের স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হরমোনের ভারসাম্যে রক্ষা করে ৷

কোন সময়ের রোদে ভিটামিন ডি থাকে?

ভিটামিন ডি দেহের চাহিদার অনেকাংশ সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আমরা পেয়ে থাকি ৷ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি(UVB) ত্বকের কোলেস্টেরল মাধ্যমে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভিটামিন ডি উৎপাদিত হয় ৷

তবে আমাদের প্রশ্ন থাকতে পারে দিনের কোন সময়ে রোদে ভিটামিন ডি থাকে ৷ সাধারনত বলা হয়ে থাকে সকাল ১০টা থেকে ৩টার সময় সূর্যালোকের মাধ্যমে ভিটামিন ডি তৈরি হওয়ার একটি উৎকৃষ্ট সময় ৷

তবে আপনার যদি মনে হয় প্রচুর রৌদ্র, ত্বক জ্বালাপোড়া করছে তখন রোদে না থাকাই ভালো ৷ কেননা প্রখর সূর্যের আলোতে আপনার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে ৷ আপনার উচিত প্রতি সাপ্তায় কয়েকবার রুটিন অনুসারে ১০-৩০ মিনিটের জন্য দেহের অধিকাংশ জায়গা রোদের আলো লাগানো ৷

রোদে ভিটামিন ডি পেতে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে,,

  • দিনের বিভিন্ন সময় এটি করতে পারেন, যখন আপনার ত্বক সূর্যের আলোতে কোনো সমস্যা নাহয় ৷ বিশেষকরে ভোরবেলা বা শেষ বিকেলে ৷
  • সপ্তাহে কয়েকবার করতে পারেন ১০-২০ মিনিট করে ৷
  • আপনি যদি খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরন করতে না পারেন, তখন সূর্যালোকের মাধ্যমে নিতে পারেন ৷
  • চেষ্ঠা করবেন শরীরের বেশিরভাগ অংশ সূর্যের আলোতে রাখা ৷ এতে দ্রুত ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারবে ৷
  • সূর্যালোক নেওয়ার অংশে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন ৷
  • মনে রাখবেন যে ফর্সা ত্বক কালো ত্বকের চেয়ে দ্রুত ভিটামিন ডি তৈরি করে। সেই অনুযায়ী সূর্যের আলোতে সময় দিবেন ৷
  • ত্বকের যেনো ক্ষতি না হয় সেজন্য বেশি সময় রোদে থাকবেন না ৷

আর ভিটামিন ডি এর উৎস কি কি?

সূর্যের আলো ছাড়া আর কিভাবে আমাদের দেহে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরন করতে পারে আসুন জেনে নেই,,

  • চর্বিযুক্ত মাছ যেমন সালমন, ম্যাকেরেল, সার্ডিন, ইলিশ এবং রুই ইত্যাদি মাছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় ৷
  • মাছের কলিজার তেলে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় ৷
  • ডিমে বিশেষ করে ডিমের কুসুম ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস ৷
  • দুধ ও কমলার রসে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় ৷
  • দুগ্ধজাত পণ্য দই এবং পনিরে ভিটামিন ডি রয়েছে ৷
  • গরুর মাংস, কলিজা, হাঁস-মুরগির উড়ুতে বিভিন্ন পরিমানে ভিটামিন ডি রয়েছে ৷
  • চিংড়ি, কাঁকড়া, ঝিনুক এবং অন্যান্য সামুদ্রিক খাবারে ভিটামিন ডি রয়েছে ৷

ভিটামিন ডি এর উপকারিতা

ভিটামিন ডি আমাদের দেহে কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ আসুন জেনে নেই,

  • হাড় শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখতে ভিটামিন ডি এর গুরুত্ত্ব অপরিসীম ৷
  • ভিটামিন ডি ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখে এবং সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে ৷
  • পেশী ফাংশন ঠিক রাখে এবং পেশী দুর্বলতা দূর করে ৷
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে ৷
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে ৷
  • মেজাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ৷
  • ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিসের ঝুকি থেকে রক্ষা করে ৷
  • ওজন নিয়ন্ত্রন করে ৷
  • অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে ৷
  • শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • ত্বকের কোষের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে এবং ত্বক ভালো রাখে ৷
  • পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো রাখে ৷

Disclaimer: এই আর্টিকেল শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং একটি ধারনা নেওয়ার জন্য ৷ এটি কখনই দক্ষ চিকিৎসকের বিকল্প হতে পারে না ৷ তাই পুষ্টিবিষয়ক যেকোনো শারিরীক সমস্যার জন্য অবশ্যই একজন দক্ষ চিকিৎসকের সরণাপন্য হবেন ৷

5/5(2 votes)
Scroll to Top