ছাগল পালন পদ্ধতি | ছাগলের খামার | Goat Farming in Bangladesh

Goat Farming in Bangladesh | ছাগল পালন পদ্ধতি: ছাগল পালন বেশ লাভজনক ব্যবসা । আজকে ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পিয়বিডির সাথেই সময় দিবেন ৷ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই অতি প্রাচীনকাল থেকে ছাগল পালন করতে দেখা যায় । বর্তমানে আমাদের দেশে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী গ্রামের অনেক মানুষের আয় ছাগল থেকে আসে । অল্প মূলধনে ও অল্প জায়গায় ছাগল পালন করা যায় ।

এদেশের আবহাওয়ায় ছাগল পালন বেশ লাভজনক । যার গাভী কেনার ও পালনের সামর্থ্য নেই , তিনি অল্প পুঁজিতে দুটি ছাগল কিনে অধিক লাভবান হতে পারেন । ছাগলের মাংস ও চামড়া দুই – ই উৎকৃষ্ট । শুধু চামড়া রফতানি থেকে প্রতি বছর আয় হয় কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা । আমাদের দেশে বেশির ভাগ লোকই ছাগলের মাংস খেয়ে শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজন মেটায় । এছাড়াও ছাগলের লোম থেকে নানারকম দ্রব্যসামগ্রী তৈরি হয় । ছাগলকে গরিবের গাভী বলা হয় ৷

Goat Farming in Bangladesh

ছাগলের জাত পরিচিতি

  • ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল —Black Bengal
  • যমুনাপারী ছাগল —Jamunapari
  • বারবারী ছাগল — Barbari
  • বীটল ছাগল — Beetle
  • সূরতি ছাগল — Surti
  • মারওয়ারী ছাগল — Marwari
  • মেহসানা ছাগল — Mehsana
  • ঝাকরানা ছাগল — Jhakrana
  • মালবারী ছাগল —Malbari
  • ওসমানাবাদি ছাগল — Osmanabadi
  • সংগমনেরী ছাগল — Sangamneri
  • পাশমিনা বা চেঙ্গথ্যানগি ছাগল —Pashmina or Chengthangi
  • গাড্ডি ছাগল —Gaddi
  • কাশ্মীরি ছাগল —Kashmiri
  • গানজাম ছাগল —Ganjam
  • অলপাইন ছাগল — Alpine
  • সানেন ছাগল—Sanen
  • টোগেন বার্গ ছাগল —Togenberg
  • অ্যাংলো নুবিয়ান ছাগল —Anglo Nubian
  • ছাগল (Goat) : স্ত্রী ও পুরুষ উভয় লিঙ্গের ছাগল জাতিকে সাধারণ কথায় ‘ছাগল’ বলা হয় ।
  • কিড (Kid) : নবজাতক ছাগল ছানাকে ‘কিড’ বলা হয় । নাকে কি
  • বাকলিং (Buckling) : অ – প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ছাগলকে ‘বাকলিং’ বলা হয় ।
  • গোটলিং (Goatling) : অ – প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ছাগলকে ‘গোটলিং’ বলা হয় ।
  • ডো (Doe) : বাচ্চা দেওয়া প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ছাগলকে ‘ডো’ বলা হয় ।
  • পাঁঠা (Buck) : প্রজননক্ষম পুরুষ ছাগলকে ‘পাঁঠা’ বা ‘বাক’ বলা হয় ।
  • খাসি (Castrated) : প্রজনন শক্তি রহিত পুরুষ ছাগলকে ‘খাসি’ বলা হয় ।
  • ছাগল পাল (Goat Flock) : একসাথে অনেকগুলো ছাগল চড়লে তাকে ‘ছাগল পাল’ বলা হয় ।
  • চেভন্ (Chevon) : ছাগলের মাংসকে ‘চেভন্‌’ বলে ।

ছাগল পালন পদ্ধতি | Goat Farming in Bangladesh

ছাগলের খামার বা বাসস্থানঃ

ছাগল পালনে তাদের বাসস্থানের দিকে নজর দিতে হয় ৷ ছাগলের বসবাসের জন্য ঘরটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে প্রচুর আলো ও বাতাস প্রবেশ করতে পারে । মাটির দেয়াল দেয়া আবদ্ধ ঘরে ছাগল রাখার জন্য উপযুক্ত নয় । ছাগলের থাকার ঘরের মেঝেতে কিংবা আশেপাশে যাতে পানি জমে থাকতে না পারে । প্রতিটি বড় ছাগলের জন্য ৩ – ৮ বর্গফুট জায়গা দরকার । ছাগলের ঘর ছন , গোলপাতা , খড় , টিন বা ইটের তৈরি হতে পারে । তবে ঘরের ভিতর বাঁশ বা কাঠের মাচা তৈরি করে তার উপর রাখতে পারলে ভালো হয় ।

মাচা হলে মাটি থেকে এমনভাবে উঁচু করতে হবে যাতে সহজে নিচের ময়লা পরিষ্কার করা যায় । আর মেঝে হলে তাতে বালিমাটি ছিটিয়ে দিতে হবে , যাতে মেঝে শুকনা থাকে । ছাগলের ঘরের দেয়াল , মাচার নিচের অংশ ফাঁকা এবং মাচার উপরের অংশ নেট দেয়া যেতে পারে । বৃষ্টি যেন সরাসরি না ঢুকতে পারে সে জন্য ঘরের চালা ঝুলিয়ে দেয়া প্রয়োজন । শীতকালে রাতের বেলায় মাচার উপরের অংশ এবং দেয়াল চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে । শীতের সময় মাচার উপর পুরু করে খড়ের বেডিং বিছিয়ে দিতে হবে ।

ছাগলের খাদ্য তালিকাঃ

ছাগলের খাদ্য তালিকা তাদের বয়স, ওজন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হতে পারে ৷ যেমনঃ বাচ্চা অবস্থায় ছাগলের খাদ্য তালিকা এক রকম ৷ আবার প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তাদের খাবার তালিকা আরেক রকম এবং গর্ববতী অবস্থায় খাদ্যতালিকা অন্যরকম ৷ ছাগল পালনে যে দিকটি সবথেকে বেশি খেয়াল রাখতে হয়, তাহলো ছাগলের খাদ্যতালিকা ৷ কেননা, সুষম ও সঠিক সময়ে খাদ্য ব্যবস্থাপনা ছাগল পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷

ছাগলের বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার পর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই খাদ্য গ্রহণ করার প্রয়োজন হয় । বাচ্চা প্রসবের পর প্রথম দুধ বাচ্চাকে খাওয়ালে রোগবালাই কম হয় । জন্মের পরে ৩ মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে মায়ের দুধ বা শাল দুধ খাওয়ানো যেতে পারে । সাবলম্বী বা দুধ ছাড়ার পর থেকে সম্পূর্ণ ঘাস ও দানাদার খাওয়া দেওয়া যেতে পারে ৷ তবে ছাগলের বাচ্চা অল্প বয়সে ছোবড়া জাতীয় খাদ্য খেতে পারে । এটি সম্ভব হয় ছাগলের জিহ্বার বৈশিষ্ট্যের জন্য । অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতোই ছাগলের খাদ্যে আমিষ , শর্করা , চর্বি , খণিজ ও ভিটামিন থাকতে পারে । খামারে ছাগল পালন করতে হলে প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য তৈরির সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে , সংগৃহীত খাদ্য যেন সহজলভ্য ও সস্তা হয় ।

খাদ্য নাম পরিমান
ভুট্টা ভাঙা৪৭%
সয়াবিন খৈল৩০%
চিটা গুড়৭%
গমের ভুষি১০%
লবন১%
চুনাপাথর৩%
চিলেটেড মিনারেল মিক্স২%
মোট= ১০০%

উপরে চার্ট অনুযায়ী বিভিন্ন আকারের ছাগলের উপর নির্ভর করে প্রতিদিন 100 থেকে 500 গ্রাম দানাদার খাবার রয়েছে। একসাথে ঘাস ৫০% এবং পাতা ৫০% পর্যাপ্ত খাওয়াতে হবে কারণ ঘাসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, যা ছাগলের দেহে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত ঠিক রাখে। বেশি দানাদার দিলে অবশ্যই খাবারে এমোনিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করতে হবে। পরিমান হবে ১% মোট দানাদার খাবারের। এর ফলে আপনার ছাগলের প্রস্রাব রাস্তাতে পাথর হবেনা।

ছাগল মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি | Goat fattening system

ছাগল পালনে অত্যধিক লাভ করতে হলে, ছাগল মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি জানতে হবে ৷ এতে খরচ একটু বেশি হলেও ছাগল দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে ৷ প্রথমে আপনাকে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো ছাগল নির্বাচন করা ৷ একটি ভালো, পরিপুষ্ট, আকারে বড়-লম্বা ছাগলের নির্বাচন করা বা ক্রয় করা খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয় ৷ ছাগল বাচ্চা অবস্থায় প্রথমে তিন মাস মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে ৷ ছাগল মোটাতাজা করতে হলে প্রতি দুই থেকে তিন মাস অন্তর প্রতিটি ছাগলকে অ্যানথেলমিন্টিক্স বা কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।

ছাগলকে সুস্থ্য রাখতে লিভার টনিক খাওয়াতে হবে। ছাগলের ভিটামিনের প্রয়োজন রয়েছে ৷ তাই ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাওয়ানো যেতে পারে ৷ তাছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম ৷ সাথে জিংক সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে ৷ দানাদার খাওয়ার পাশাপাশি সবুজ ঘাস, লতা-পাতা এবং মাঠের খোলা হাওয়াতে মাঝে মাঝে রাখতে হবে ৷ এতে করে ছাগল সুস্থ থাকবে ৷ আর ছাগল মোটাতাজাকরণ করার জন্য পূর্ণবয়স্ক ছাগলের দানাদার খাদ্যের একটি তালিকা উপরে দেওয়া আছে, সেটি ফলো করতে পারেন ৷

উন্নত জাতের ছাগল কোথায় পাওয়া যায়

ছাগল পালন অত্যন্ত লাভজনক যদি তা উন্নত জাতের ছাগল হয়ে থাকে ৷ উন্নত জাতের ছাগল দেশি জাতের ছাগল অপেক্ষা বড়, লম্বা হয়ে থাকে ৷ ফলে অধিক পরিমানে দুধ ও মাংস পাওয়া যায় ৷ তাছাড়া একটি দেশি জাতের ছাগল পালন করতে যতো পরিমান খাদ্য ও সেবা-যত্নের প্রয়োজন পরে ঠিক একই পরিমান শ্রম দিয়ে একটি উন্নত জাতের ছাগল পালন করলে আরও বেশি লাভবান হওয়া যায় ৷

আপনারা যারা ছাগল পালন করেন, তারা অনেকেই জানতে চান যে উন্নত জাতের ছাগল কোথায় পাওয়া যায় ৷ উন্নত জাতের ছাগলগুলো কোথা থেকে কিনবেন ৷ বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় উন্নত জাতের ছাগল পাওয়া যায় ৷ বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলোতে উন্নত জাতের ছাগল পাওয়া যায় ৷ যেমনঃ চট্রগ্রাম, ঢাকা ইত্যাদি ৷ বিভিন্ন বড় বড় খামার থেকে উন্নত জাতের ছাগল সংগ্রহ করতে পারেন ৷ বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন(ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট) থেকে সংগ্রহ করতে পারেন ৷ বর্তমানে পশু বিক্রির অনলাইন সাইট(www.digitalhaat.net) অর্থাৎ ডিজিটাল হাট চালু হয়েছে ৷ উন্নত জাতের ছাগলগুলোর মধ্যে রয়েছে,

  • ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল
  • বারবারি ছাগল
  • বোয়ার জাতের ছাগল
  • সিরোহি ছাগল
  • যমুনাপারি বা রাম ছাগল ও
  • বিটল ছাগল

রাম ছাগল বা যমুনাপাড়ি ছাগলঃ Jamunapari Goat

ভারতে যমুনাপাড়ি ছাগল আর বাংলাদেশে রামছাগল হিসেবে পরিচিত ৷ যমুনাপাড়ি ছাগল কেই আমরা রাম ছাগল বলে ডেকে থাকি। বাংলাদেশের মানুষ ছাগলের এ জাতটি মাংস ও দুধ উভয়ের জন্য পালন করা হয়। রাম ছাগল বা যমুনাপাড়ি ছাগলের শরীরের রং সাদা, কালো , হলুদ, বাদামী এবং বিভিন্ন রঙয়ের সংমিশ্রণে হয়ে থাকে। রাম ছাগল অন্যান্য ছাগল থেকে লম্বা হয়ে থাকে ৷ এদের কান লম্বা, ওলান বেশ বড়, সুগঠিত ও ঝুলন্ত হয়। এদের শরীরের উচ্চতা ৩২-৪০ ইঞ্চি বা এর অধিক হতে পারে। যমুনা পাড়ি জাতের ছাগী বছরে একবার বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবার ১-২ টি বাচ্চা প্রসব করে। যেহেতু ছাগলটি বড়, লম্বা এবং ওলান বেশ বড়, তাই এরা অনেক বেশি দুধ দিয়ে থাকে(প্রতিদিন প্রায় ১.৫-২ কেজি) ৷

Jamunapari Goat

রাম ছাগলের বাচ্চার দাম

রাম ছাগল পানল বাংলাদেশে অনেক লাভজনক ৷ কেননা ছাগলটি অন্যান্য ছাগল থেকে আকারে বড়, লম্বা হয়ে থাকে ৷ এরা দুধ দেয় বেশি, তবে বছরে একবার বাচ্চা দেয় ৷ পশুবিদদের মতে , ভারতের গঙা , যমুনা ও চম্বল নদীর মধ্যবর্তী জেলা এ জাতের ছাগলের আদি বাসস্থান । এরা ‘ রামছাগল ’ নামেই বেশি পরিচিত । এটি দুধ উৎপাদনকারী জাত । আমাদের দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এ জাতের ছাগল দেখা যায় । এরা খোলা জায়গায় থাকতে পছন্দ করে । বর্তমানে দেশের বিভিন্নস্থানে এ ছাগল লালন – পালন করা হচ্ছে । এ ছাগল বেশ লাভজনক ।

একটি দুই মাসের রামছাগল বা যমুনাপাড়ি ছাগলের দাম ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে । রাম ছাগলের ক্রস বাচ্চার দাম ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকা। শিরতি ক্রস বাচার দমা ১০ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে ৷

তাছাড়া ছাগলের যোগান ও চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন বাজার এবং সময়ে বিভিন্ন হয়ে থাকে ৷ শীতকালে ছাগলের দাম কম থাকে, তখন তখন আপনারা ছাগল পালনের জন্য ক্রয় করে থাকবেন ৷ তখন বিক্রি করবেন না ৷

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলঃ Black Bengal Goat

বাংলাদেশী কালো ছাগল বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের সমগ্র পশ্চিম বাংলা আসাম ও মেঘালয়ে পাওয়া যায় । এদের নাম কালো ছাগল হলেও সাদা , বাদামী অথবা কালো রঙের সাথে সংমিশ্রণ অবস্থায় দেখা যায় । এই জাতের ছাগলের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু । মাংসের জন্য এদের কদর সর্বত্র । বছরে দুইবার এবং একত্রে দু’টো হতে সর্বাধিক ছয়টা পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করার নমুনা আছে । এরা দ্রুত বংশবিস্তার ঘটাতে পারে ।

আফ্রিকার বেটে বা ছোট জাতর ছাগলের মত এরা অথ্যাধিক কষ্টসহিষ্ণু ও চঞ্চল । অত্যন্ত নিম্নমানের ঘাসপাতা , লতাগুল্ম , কাটাঝোপ , গাছের ছাল – শিকড় ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করতে সক্ষম । সুষম খাদ্য দিলে এবং ব্যবস্থাপনা উন্নত হলে দৈনিক দেড় লিটার পর্যন্ত দুধ দিতে পারে । তবে একসাথে অধিক বাচ্চা জন্মগ্রহণ করার ফলে অনক সময় দুধে টান পড়ে । ফলে বাচ্চা অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগে এবং পরে মারা যায় । এদের সোজা কান ও খাড়া বা বাঁকা শিং থাকে ।

এরা আকারে খুব ছোট । পূর্ণ বয়স্ক একটি পাঠার ওজন ২৫ থেকে ৩০ কেজি । পাঠীর ওজন ১৫ থেকে ২০ কেজি । শরীরের লোম ছোট , সুবিন্যাস্ত , রেশমী এবং কোমল । লোমের গোড়া চামড়ার গভীরে কম প্রবিষ্ট থাকার ফলে উন্নতমানের পাকা চামড়া উৎপন্ন হয় । যে – সমস্ত ছাগলের লোম বড় কোঁকড়ানো ও রুক্ষ তাদের চামড়ার গভীরে লোম প্রবিষ্ট থাকে । ফলে চামড়া পাকা করার পরে স্পনজী বা শোষক অবস্থা প্রাপ্ত হয় ।

Black Bengal Goat

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দাম

দেশি ছাগলে মধ্যে ব্ল্যাক বেঙ্গল বা বাংলাদেশী কালো ছাগল অন্যতম ৷ গরিব লোকেরা জীবিকা নির্বাহের জন্য ছাগল পালন করে থাকে । শুধু গরিব লোকেরা নয় , বর্তমানে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরাও কিছু আয়ের আশায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করে । উন্নত গুণসম্পন্ন জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট ছাগল পালনের জন্য বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের কাছে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে

৫-৬ মাসের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চার দাম আনুমানিক ২-৩ হাজার টাকা হতে পারে। তবে সবসময় যে একরকম থাকবে তা কিন্তু নয় ৷ সময়ে সময়ে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দাম উঠা-নামা করতে পারে ৷ চার(৪) মাসের গাভীন ছাগলের দাম আনুমানিক সাড়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা হয়ে থাকে। আট থেকে নয়(৮-৯) মাস বয়সের খাসির দাম আনুমানিক ৫-৮ হাজার টাকা হতে পারে।

ছাগলের রোগ সমূহ

ছাগল পালনে সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো ছাগলের রোগ ৷ তবে পূর্বে সচেতন থাকলে ছাগলের রোগ থেকে অনেকাংশ রক্ষা পাওয়া যায় ৷ এগুলোর মধ্যে ভ্যাক্সিন, টিকা, ইনজেকশন, বিভিন্ন ভিটামিন খাওয়ানো ইত্যাধি ৷ ছাগলের বসবাসের স্থান পরিষ্কার পরিচন্ন রাখা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকলে এবং সবুজ ঘাস, লতা-পাতা খাওয়ালে ছাগলের রোগ বহুমাত্রা কমানো সম্ভব ৷

ছাগলের রোগসমূহের(Diseases of Goat) মধ্যে রয়েছে অ্যানথ্রাক্স, ব্রুসেলোসিস, এন্টারোটোক্সেমিয়া, পা পচা রোগ, রক্তক্ষরণ সেপটিসেমিয়া, ম্যাসাটাইটিস, নিউমোনিয়া, পা এবং মুখের খুরা রোগ, গোট পক্স বা বসন্ত, পিপিআর ইত্যাদি ৷

ছাগল পালনে উপকারিতা | Benefits of Goat rearing

  • ছাগল পালনে বেশি মূলধন প্রয়োজন পড়ে না ৷ প্রথমে দুটি ছাগী ছাগল দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন ৷
  • ছাগল একটি বহুমুখী প্রাণী, এর থেকে মাংস, দুধ, উল, সার ও ঔষধি পাওয়া যায়।
  • ছাগল পালনে দেখা – শোনার জন্য অতিরিক্ত শ্রমের দরকার পড়ে না । কম শ্রম ও সময় দিয়ে সহজে ছাগল পালন করা সম্ভব ৷
  • ছাগল পালনে আলাদা লোকের প্রয়োজন পড়ে না ৷ ছোট ছেলে – মেয়ে বা গৃহিণীরা খুব সহজে ছাগল পালন করতে পারে ।
  • ছাগল পালন এমন একটি ব্যবসা যা ছোট খামারিরাও সহজেই করতে পারেন।
  • ছাগল সাধারণত বছরে দুবার বাচ্চা প্রসব করে ও প্রতিবারে ২-৫ টি বাচ্চা হয় ।
  • ছাগলের থাকার জন্য বৈচিত্র্যময় বা বিশেষ ব্যবস্থা সম্পন্ন কোনো ঘরের প্রয়োজন নেই । এছাড়া ছাগল রাখার জন্য খুব বেশি জায়গাও লাগে না । ছাগল পালনের জন্য আলাদা ঘরের প্রয়োজন হয় না । নিজেদের থাকার ঘরের পাশে লাগোয়া একটা চালাঘর করে দিলেই ছাগল অনায়াসেই থাকতে পারে । ছাগল পালন করার জন্য আলাদাভাবে চারণভূমি (Pasture Land)-র প্রয়োজন হয় না ।
  • ছাগীর বাচ্চাগুলো সহজে বড় হয়ে যায় । ছাগলের বৃদ্ধির হার খুব ভালো । ছাগী দশ থেকে বারো মাস বয়সে গর্ভিণী হয় ৷
  • ছাগল/ Goat পালন কম জায়গায় ও সহজে করা যায় । ইচ্ছা করলে নিজের বসবাসের ঘরের কোণে ছাগল পালন করা যায়, যদি একটি কিংবা দুটি হয়ে থাকে ৷
  • ছাগলের খাদ্য খরচ কম । ছাগল চাষে খাবারের জন্য কোনো খরচ নেই বললেই চলে । মাঠের ঘাস , আর লতা – পাতা খেয়ে এরা জীবন ধারণ করে । গরু মহিষের চরার পর মাঠে যে ঘাসের অবশিষ্টাংশ থাকে , তা এরা খুঁটে খুঁটে খেয়ে পেট পুরে নেয় । বাগানের আগাছা , লতা – পাতা , আনাজের খোসা , ফলের খোসা প্রভৃতি যা গরু মহিষ খায় না , ছাগল তা খেয়ে জীবনধারণ করতে পারে ।
  • ছাগল পালনে কম বিনিয়োগে বেশি লাভ পাওয়া যায় । কেননা, অল্প টাকা ইনভেস্ট করে ভালো পরিমান মুনাফা অর্জন সম্ভব ৷
  • ছাগলের দুধ ও মাংস অতি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু । দুধ ও মাংসের জন্যে ছাগল পালন অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ । ছাগল থেকে প্রতিবছর অনেক দুধ পাওয়া যায় । গরু ও ছাগল দুধের পুষ্টিগত মূল্যের কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই । ছাগলের দুধ সহজেই হজম হয় । ছাগলের দুধ শিশু ও রোগীর পক্ষে উত্তম পানিয় । ছাগলের দুধে শতকরা ২-৩ ভাগ স্নেহ পদার্থ থাকে । এই দুধে খনিজ লবণ ( যেমন : ক্যালসিয়াম , ফসফরাস ইত্যাদি ) এবং ক্লোরিনের পরিমান বেশি থাকে । কিন্তু লৌহের পরিমাণ কম থাকে । বয়স্ক , শিশু ও পেটের রোগীদের পক্ষে ছাগলের দুধ অনেক ভালো । তবে ছাগলের দুধ উৎপাদনের পরিমাণ আমাদের দেশে খুবই কম । মাংস উৎপাদক প্রাণীদের মধ্যে ( মুরগি ছাড়া ) ৩৫ শতাংশ মাংস ছাগল থেকে পাওয়া যায় । ৬-১২ মাস বয়সের ছাগল থেকে উন্নত গুণসম্পন্ন মাংস পাওয়া যায় । বর্তমানে ছাগলের মাংসের চাহিদা উৎপাদনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ।
  • ছাগলের লোম বা চামড়া থেকে উল তৈরি হয় এবং তা থেকে নানা রকমের গরমের পোশাক তৈরি হয় ।

শেষ কথাঃ ছাগল(Goat) পালন লাভজনক ব্যবসা ৷ প্রথমে ছোট খামার কিংবা বানিজ্যিক ভাবে ছাগল পালন করতে পারেন ৷ ছাগল পালনে পূর্ব সচেতন থাকলে রোগের পরিমান অনেকাংশ কমানো যায় ৷ সুষম খাবার, টিকা এবং দানাদার খাবার ছাগল সহজে মোটাতাজাকরণ করা সম্ভব ৷ ছাগল পালনে সুবিধা রয়েছে প্রচুর ৷ দুধ ও মাংস পাওয়ার জন্য ছাগল পালন করতে পারেন ৷

উন্নত জাতের ছাগলের নাম কি?

বাংলাদেশে বেশ কিছু উন্নত জাতের ছাগল রয়েছে ৷ উন্নত জাতের ছাগল পালন বেশ লাভ জনক ৷ প্রথমে দু-একটি দিয়ে শুরু করতে পারেন ৷ বাংলাদেশে উন্নত জাতের ছাগলের নাম হলোঃ
১. ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল
২. যমুনাপারী জাতের ছাগল
৩. বিটাল জাতের ছাগল

ছাগলের রোগ সমূহ কি?

ছাগলের বেশকিছু রোগ রয়েছে ৷ এগুলোর মধ্যে প্রধান হলোঃ পিপিআর, পা পচা রোগ, রক্তক্ষরণ সেপটিসেমিয়া, ম্যাসাটাইটিস, নিউমোনিয়া, পা এবং মুখের খুরা রোগ, গোট পক্স বা বসন্ত ইত্যাদি ৷

5/5(5 votes)
Scroll to Top