চাকমাদের প্রধান উৎসব কি [MCQ]

5/5(1 vote)

[Question] চাকমাদের প্রধান উৎসব কি?

(ক)বৈষাখী পূর্ণিমা
(খ)মাঘী পূর্ণিমা
(গ)বড়দিনের উৎসব
(ঘ)বিজু

উত্তরঃ (ঘ) বিজু


চাকমাদের প্রধান উৎসব হলো বিজু ৷

চাকমাদের উৎসব

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিত। দেশের মোট আদিবাসীর বেশিরভাগের বসবাস এখানে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে চাকমা সম্প্রদায় সর্ববৃহৎ। সুপ্রাচীনকাল থেকেই চাকমারা সমৃদ্ধ সংস্কৃতির অধিকারী। প্রবাদ-প্রবচন, ধাঁধাঁ, ছড়া, বারমাসী, শোকগাঁথা, প্রেমসংগীত, ভাবসংগীত, ইতিকথা, উপাখ্যান, ইত্যাদি উপাদানের সমন্বয়ে চাকমা লোকসাহিত্যের ভাণ্ডার প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হয়েছে। বৈচিত্র্যের ব্যাপকতায় এবং জীবনের সঙ্গে একাত্মতার কারণে চাকমাদের এসব লোকসাহিত্য যুগ যুগ ধরে সমাদৃত হয়ে এসেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত প্রধান তিন নৃগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিত। বৈসুক, সাংগ্রাই ও বিঝু এই তিন নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে বৈসাবি নামের উৎপত্তি। আদিবাসীরা বর্ষবরণ উৎসব পালন করে ভিন্ন ভিন্ন নামে। বর্ষবরণ উৎসবকে ত্রিপুরারা ‘বৈসু’, মারমারা ‘সাংগ্রাই’ এবং চাকমারা ‘বিজু’ বলে অভিহিত করে। পার্বত্য জেলাগুলোতে বছরের শেষ দুই দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন বর্ষবরণ উৎসব ‘নামদিন’ পালিত হয়। এ সময়ে পুরনো বছরের কালিমা আর জীর্ণতাকে ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় তারা। এসময় তাদের সমাজে ফুল দিয়ে গৃহ সাজানো, নদীতে ফুল ভাসানো, গুরু জনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, অতিথিদের বিভিন্ন পিঠা, মিষ্টি ও ফলমূল বিতরণ, ভিক্ষু সংঘকে সোয়াইং বা পিণ্ডদান, বুদ্ধপূজা, যুবক-যুবতীর ঘিলা খেলা, নাধেং খেলা, জলকেলি ইত্যাদির প্রচলন রয়েছে।

চাকমারা চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে ‘ফুল বিজু’, ৩০ তারিখে ‘মূল বিঝু’ এবং বৈশাখের প্রথম দিন ‘গজ্যাপজ্যা বিজু’ নামে এই তিন ভাগে ভাগ করে তাদের বর্ষবরণ উৎসব ‘বিঝু’ পালন করে। চাকমারা ফুল বিঝুর দিন অরণ্য থেকে ফুল সংগ্রহ করে চার ভাগে ভাগ করে এক ভাগ ফুল ও নিমপাতায় ঘরবাড়ি সাজায়। দ্বিতীয়ভাগ ফুল দিয়ে বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে প্রার্থনা করে। তৃতীয়ভাগ ফুল নদী, খাল ও পুকুরের পাড়ে তৈরি পুজামণ্ডপে রেখে প্রার্থনা করে এবং চতুর্থ ভাগ ফুল দিয়ে প্রিয়জন ও বয়োজ্যেষ্ঠদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়। মূলবিঝুর দিনে অসংখ্য কাঁচা তরকারির সংমিশ্রণে পাজন বা ঘণ্ট তৈরি করা হয়। এছাড়াও পায়েস ও নানা রকমের পিঠা, মাছ, মাংস, খই, নাড়ু, সেমাই ইত্যাদি খাবার তৈরি করা হয়। তাছাড়াও এদিন তারা মন্দিরে গিয়ে মোম জ্বালিয়ে ফুল দিয়ে বুদ্ধের পুজা করে থাকে। গজ্যাপজ্যা অনুষ্ঠিত হয় নববর্ষের প্রথম দিনে।