[Question] চাকমাদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে বলা হয়?
(ক) | সাংগ্রেন |
(খ) | বিজু |
(গ) | তনচংগা |
(ঘ) | নও উৎসব |
চাকমা শিশু জন্মশুদ্ধি ও সামাজিক আচার
চাকমা শিশু জন্মরীতিকে ঘিরে টি. এইচ. লুইন (১৮৬৯) ও সতীশচন্দ্র ঘোষের (১৯০৯) আলোচনা প্রায় অভিন্ন। সুগত চাকমা (১৯৮৩) লুইন ও ঘোষের বক্তব্যের বিরোধীতা না করে কেবল নতুন কিছু তথ্য সংযোজন করেছেন। যেমন- ‘সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার একমাস পর্যন্ত প্রসূতিকে অপবিত্র মনে করা হয়। পুত্রসন্তান জন্মালে বাজি, আতশ পুড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করা হলেও কন্যাসন্তানের ক্ষেত্রে সেরূপ কিছু করা হয় না। নবজাতকের নামকরণের জন্য আলাদা কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়না।
শিশুর নাম রাখার ক্ষেত্রে সাধারণত পূর্ব পুরুষদের নামকে বেছে নেয়া হয়। প্রসূতি মৃতবৎসা হলে বা দীর্ঘ বিলম্বে কারো সন্তান হলে নবজাতকের তুচ্ছ, নিকৃষ্ট, অনেকক্ষেত্রে জঘন্য ধরনের নাম রাখা হয়। চাকমাদের বিশ্বাস এরূপ নাম যমেরও অরূচি হবে’। একসময় চাকমাদের শিশু নামকরণে ব্যাপক হিন্দুয়ানীর প্রভাব ছিলো। বেদ, রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পুরাণে বর্ণিত দেব-দেবীর চরিত্র থেকে বাছাই করা নাম রাখা হতো। বর্তমানে চাকমা নবজাতকের নামকরণ হিন্দু পৌরণিক চরিত্র ছাড়িয়ে পাশ্চাত্য প্রভাবান্বিত হয়ে পড়েছে।
চাকমা সমাজে গর্ভবতী মহিলাকে নিজের স্বামীর ঘরে বা স্বামীর গোষ্ঠীভুক্ত কারো ঘরে সন্তান প্রসব করতে হয়। সেটা সম্ভব সম্ভব না না হলে প্রসূতির জন্য পৃথক ঘর তৈরি করে নিতে হয়। শিশু জন্মের পর প্রসূতিকে অশুচি বিবেচনা করে তাকে রান্নাবান্নার কাজ থেকে বিরত রাখা হয়। কাঁচা হলুদ, ঘিলার শাঁষ, চাল, বন্য হলুদ ইজিং ও সোনারূপা ভেজানো পানি ছিটিয়ে প্রসূতিকে শুদ্ধ করার পর সে রান্নাঘরে ঢোকার অনুমতি পায়। ‘এ সময় কোন পাহাড়ী বৈদ্য সে বাড়িতে কোনরূপ খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ করতে পারেনা।
যারা তান্ত্রিকমতে বাঘের মন্ত্র বা অন্যান্য বিষয়ে তান্ত্রিকতার কাজ করে তাদের বেলায় এই নিষেধাজ্ঞা বিশেষভাবে প্রযোজ্য’ ৭৪। চাকমা পরিবারে শিশু জন্মের সাথে সাথে শিশুর মুখে মধু দেয়া হয়। জন্মের সাত দিন পর ‘ঘিলে কজই’ পানি দিয়ে শিশুর চুল ধুয়ে তাকে পবিত্র করা হয়। এ অনুষ্ঠানকে ‘কজই পানি লনা’ বলে। অনুষ্ঠানে আত্মীয় স্বজনকে নিমন্ত্রন করে খাওয়ানো এবং ধাত্রী বিদায় করা হয়। মাস কয়েক পর নাপিত ডেকে শিশুর মাথা মুড়ানো হয়। মাতৃগর্ভ থেকে যে চুল নিয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করে তাকে ‘বিচ্চুল’ (বিষচুল) বলে।