মেঘনাদবধ কাব্যের সর্গ সংখ্যা কয়টি? [MCQ]

5/5(3 votes)

[Question] মেঘনাদবধ কাব্যের সর্গ সংখ্যা কয়টি?

(ক)৮টি
(খ)৯টি
(গ)১২টি
(ঘ)১৫টি

উত্তরঃ (খ) ৯টি


সংক্ষেপে ব্যাখ্যাঃ

মেঘনাদবধ কাব্যের সর্গ সংখ্যা নয়টি ৷ তা হলোঃ

  • মেঘনাদবধ কাব্যের প্রথম সর্গের নাম – অভিষেক ৷
  • মেঘনাদবধ কাব্যের দ্বিতীয় সর্গের নাম – অস্ত্রলাভ ৷
  • মেঘনাদবধ কাব্যের তৃতীয় সর্গের নাম – সমাগম ৷
  • মেঘনাদবধ কাব্যের চতুর্থ সর্গের নাম – অশোকবন ৷
  • মেঘনাদবধ কাব্যের পঞ্চম সর্গের নাম – উদ্যোগ ৷
  • মেঘনাদবধ কাব্যের ষষ্ঠ সর্গের নাম – বধ ৷
  • মেঘনাদবধ কাব্যের সপ্তম সর্গের নাম – শক্তিনির্ভেদ ৷
  • মেঘনাদবধ কাব্যের অষ্টম সর্গের নাম – প্রেতপুরী ৷
  • মেঘনাদবধ কাব্যের নবম সর্গের নাম – সংস্ক্রিয়া ৷

মেঘনাদবধ কাব্যে সর্গগুলো ব্যাখ্যাঃ

মেঘনাদবধ কাব্যের কাহিনীর ঘটনাকাল তিন দিন (সূক্ষ্ম হিসাবে আড়াই দিন) দুই রাত্রি মাত্র। এই সংকীর্ণ কালে বহুবিস্তীর্ণ ক্ষেত্রের মধ্যে কবি কাহিনীর বিচিত্র ঘটনাবলীকে প্রসারিত করেছেন। লংকা, সাগরনিম্নে বারুণীর গৃহ, প্রমোদ উদ্যান, অমরাবতী, কৈলাস, যোগাসন পর্বত, মায়ার নিকেতন, চণ্ডীর দেউল, নরক প্রভৃতি নানা স্থানের বর্ণনাবৈচিত্র্যের বিস্ময়কর পটভূমিকায় কাহিনী অশ্লথ গতিতে অগ্রসর হয়ে চলেছে।

প্রথম সর্গ আরম্ভ হয়েছে রাবণের অন্যতম বীরপুত্র বীরবাহুর মৃত্যুঘটনার বর্ণনা দিয়ে-শেষ হয়েছে মেঘনাদের সৈনাপত্যবরণে। সর্গের নাম সেই হেতু হয়েছে ‘অভিষেক’। সর্গের কালসীমা মধ্যাহ্ন থেকে দিবাবসান পর্যন্ত। পুত্রশোকাতুর রাবণ বীরবাহুজননী চিত্রাঙ্গদার ভর্ৎসনায় ক্ষিপ্ত হয়ে যুদ্ধসজ্জা করলেন। বীরপদভরে লংকা কেঁপে উঠল এবং সেই কম্পনের স্পন্দনে সাগরতলে বারুণীর প্রাসাদ প্রকম্পিত হল। বারুণীর আদেশে মুরলা-সখী লংকার রাজলক্ষ্মীর সঙ্গে দেখা করতে এল। লক্ষ্মী-মুরলা আলোচনাপ্রসঙ্গে জানা গেল মেঘনাদ জীবিত ও বীরবাহু বধের খবর সে জানে না। লক্ষ্মী ছদ্মবেশে গিয়ে মেঘনাদকে এই খবর দিলেন। মেঘনাদ লংকায় এসে পিতার নিকটে যুদ্ধে যাবার অনুমতি চাইলেন। রাবণ মেঘনাদকে সেনাপতি পদে অভিষেক করলেন।

দ্বিতীয় সর্গের নাম ‘অস্ত্রলাভ’। মূল বিষয়-শিবের আনুকূল্যে রামচন্দ্রের মেঘনাদবধের উপায় জানা ও অস্ত্রসম্ভার প্রাপ্তি। ঘটনাকাল প্রথম অর্থাৎ পূর্বোক্ত ঘটনার ঠিক পরবর্তী রজনীর প্রথমার্ধ। লক্ষ্মী এসে স্বর্গে খবর দিলেন যে মেঘনাদ সেনাপতি হয়েছেন। ইন্দ্র শচীকে নিয়ে কৈলাসে গেলেন। শিব অনুপস্থিত। পার্বতী জানালেন যে দুর্গম যোগাসন পর্বতে শিব ধ্যানমগ্ন। ইন্দ্র ও ইন্দ্রানীর আবেদনে দেবী রাবণের বিরুদ্ধে যেতে রাজী হলেন না। এমন সময় রামচন্দ্রের প্রার্থনা কৈলাসে ভেসে এল। তখন দেবী রতির সাহায্যে মোহিনী মূর্তি ধারণ করলেন এবং কামদেবতাকে নিয়ে শিবের ধ্যান ভাঙতে গেলেন। শিব মেঘনাদবধের উপায় বলে দিলেন। তদনুসারে ইন্দ্র মায়ার নিকেতনে এসে রুদ্রতেজে সৃষ্ট অস্ত্রাদি নিয়ে গেলেন এবং গন্ধর্বরাজ চিত্ররথকে দিয়ে তা রামচন্দ্রের শিবিরে পাঠিয়ে দিলেন।

তৃতীয় সর্গের নাম ‘সমাগম’। মূল বিষয় প্রমোদ-উদ্যান থেকে প্রমীলার লংকাপ্রবেশ। ঘটনাকাল সেই প্রথম রাত্রির প্রথমার্ধ অর্থাৎ দ্বিতীয় সর্গের ঘটনার প্রায় সমসাময়িক। মেঘনাদ প্রমীলাকে আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিল যে অবিলম্বে রাম-লক্ষ্মণকে বিনাশ করে সে প্রমীলার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু তার বিলম্ব দেখে প্রমীলা ব্যাকুল হল এবং স্ববলে লংকায় স্বামীর সহিত মিলিত হবার জন্য রণবেশে অগ্রসর হল। রাম তাকে লংকা-প্রবেশের অনুমতি দিলেন। সখীগণসহ প্রমীলা লংকায় গিয়ে মেঘনাদের সহিত মিলিত হল। ভীত রামচন্দ্র তখন বিভীষণ ও লক্ষ্মণকে পাঠালেন ব্যূহ পরীক্ষা করতে। দেবী পার্বতী প্রমীলার তেজ হরণ করলেন।

চতুর্থ সর্গের নাম ‘অশোক বন’। মূল ঘটনা-সীতার মুখে তাঁর সুখদুঃখের কাহিনী এবং যুদ্ধের কারণ ও পরিণতি শ্রবণ। ঘটনাকাল সেই প্রথম রাত্রির প্রথমাংশ অর্থাৎ দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্গের ঘটনার প্রায় সমসূত্রে অনুষ্ঠিত। ইন্দ্রজিত সেনাপতি হয়েছে শুনে চেড়ীরা বিজয়োৎসবে মেতে গিয়েছে, সেই অবসরে সরমা এসেছে সীতার কাছে। সীতা তাকে বললেন, কিভাবে রাবণ তাঁকে চুরি করেছেন, জটায়ু নিহত হয়েছেন এবং সীতা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় এই ভবিষ্যৎ দর্শন করেছেন যে-রাম বানরদের সাহায্যে লংকায় এসে রাবণকে সবংশে বধ করে সীতাকে উদ্ধার করবেন।

পঞ্চম সর্গের নাম ‘উদ্যোগ’। মূল বিষয়-লক্ষ্মণ কর্তৃক লংকার উত্তর দুয়ারে চণ্ডীর অর্চনা এবং দেবীর আদেশে ইন্দ্রজিতবধের জন্য যাত্রা এবং ওদিকে মেঘনাদের যজ্ঞাগারে আগমন। ঘটনাকাল সেই প্রথম রাত্রির শেষভাগ। স্বর্গে উদ্বিগ্ন ও বিনিদ্র ইন্দ্রকে আশ্বস্ত করে মায়াদেবী লক্ষ্মণের কাছে সুমিত্রার বেশে স্বপ্ন দিয়ে আদেশ দিলেন-লংকার উত্তরে চণ্ডীর মন্দিরে একাকী গিয়ে অর্চনা করতে। রাম এই দুঃসাহসিক কাজ করতে দিতে প্রথমে রাজী হোলেন না, পরে বিভীষণের পরামর্শে অনুমতি দিলেন। লক্ষ্মণ একাকী চললেন। পথে মায়া-ঝড়, মায়া-সিংহ, মায়া-কামিনীরা তাঁকে ভীত ও প্রলুব্ধ করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। শেষে লক্ষ্মণ দেবীর অনুমতি নিয়ে শিবিরে ফিরলেন। ওদিকে মেঘনাদ শয্যা ত্যাগ করে প্রমীলা সহ জননী মন্দোদরীকে প্রণাম করতে গেলেন। মন্দোদরী পুত্রের কল্যাণ কামনায় সারারাত শিবপূজা করছিলেন, পুত্রকে যুদ্ধে যেতে বারণ করলেন। মেঘনাদ তাঁকে সান্ত্বনা দিলেন। মন্দোদরী প্রমীলাকে নিজের কাছে থাকতে বললেন। প্রমীলার কাছে বিদায় নিয়ে মেঘনাদ একাকী যজ্ঞাগারে চললেন।

ষষ্ঠ সর্গের নাম ‘বধ’। মূল বিষয়-মেঘনাদ বধ। প্রথম রাত্রির অন্ত্য প্রহরের ঘটনা। রাম কিন্তু লক্ষ্মণকে মেঘনাদের যজ্ঞাগারে পাঠাতে রাজী হলেন না। তখন আকাশবাণী হোল। রাম প্রিয় ভ্রাতাকে দেবঅস্ত্রে সজ্জিত করে বিভীষণের সহিত পাঠিয়ে দিলেন। মায়ার অনুরোধে লংকার রাজলক্ষ্মী তেজ সংহরণ করলেন। অদৃশ্যভাবে যজ্ঞাগারে প্রবেশ করলেন লক্ষ্মণ। প্রথমে মেঘনাদ তাঁকে ইষ্টদেবতা বলে ভ্রম করলেন। পরে ভুল ভাঙলে লক্ষ্মণ যখন নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করতে উদ্যত হলেন, তখন মেঘনাদ অতর্কিত আঘাত করলেন লক্ষ্মণকে, লক্ষ্মণ সংজ্ঞা হারালেন। এই সুযোগে মেঘনাদ অস্ত্রশালায় প্রবেশ করতে গিয়ে বিভীষণের দ্বারা বাধা পেলেন। অনুরোধ, মিনতি, ভর্ৎসনা কিছুতেই বিভীষণ দ্বার ছেড়ে দিলেন না। এই অবসরে প্রাপ্তচেতন লক্ষ্মণ মেঘনাদকে বধ করলেন।

সপ্তম সর্গের নাম ‘শক্তিনির্ভেদ’। মূল কাহিনী-রাবণের প্রতিশোধ গ্রহণ তথা পুত্রহন্তা লক্ষ্মণকে শক্তিশেলে পাতন। ঘটনাকাল দ্বিতীয় দিবস। প্রভাতে শিবপ্রেরিত বীরভদ্র রাবণকে জানাল মেঘনাদবধের কথা এবং প্রতিশোধ নিতে উৎসাহ দিল। রাবণ সজ্জিত হোলেন। ওদিকে দেবগণ সহ ইন্দ্রও যুদ্ধে অবতীর্ণ হোলেন। ভীতা পৃথিবী শরণ নিলেন বিষ্ণুর। বিষ্ণু গরুড়কে দেবতেজ হরণ করিবার আদেশ দিলেন। রাবণ ভীতা মন্দোদরীকে আশ্বস্ত করে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করে দেখলেন ইন্দ্রজিতবধে উল্লসিত ইন্দ্র সসৈন্যে যুদ্ধে এসেছেন। ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে রথ চালনার আদেশ দিলেন রাবণ। পথে বাধা দিলেন দেবসেনাপতি কার্তিকেয়। পরে দেবী পার্বতীর আদেশে আহত কার্তিকেয় রাবণকে পথ ছেড়ে দিলেন। ইন্দ্রও মহা রুদ্রতেজে বলীয়ান রাবণের হাতে পরাভূত হোলেন। সুগ্রীব এবং হনুমানেরও হার হোল। শেষে রাবণ লক্ষ্মণকে দেখতে পেলেন। তুমুল যুদ্ধ হোল। লক্ষ্মণের বীরত্বে মুগ্ধ হলেন রাবণ। শেষে শক্তিশেলাঘাতে লক্ষ্মণ ভূপাতিত হলেন। লক্ষ্মণ দেহ রথে তুলতে চেষ্টা করলেন রাবণ। পার্বতীর অনুরোধে শিব বীরভদ্রকে পাঠালেন একাজে রাবণকে নিষেধ করতে। রাবণ বিজয়গৌরবে লংকায় প্রবেশ করলেন।

অষ্টম সর্গের নাম ‘প্রেতপুরী’। মূল বিষয়-রামের প্রেতপুরীতে গমন এবং সেখানে দশরথের নিকট থেকে লক্ষ্মণের জীবনলাভের উপায় পরিজ্ঞাত হওয়া। ঘটনাকাল -দ্বিতীয় রাত্রি। ভ্রাতার মৃত্যুতে রাম অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। জ্ঞানলাভ করে বিলাপ করতে লাগলেন। ওদিকে কৈলাসে পার্বতীর প্রার্থনায় শিব নিজের ত্রিশূল দিলেন মায়াকে। মায়া সেটি হাতে করে রামচন্দ্রের নিকট এলেন এবং তাঁহাকে সঙ্গে করে প্রেতপুরীতে চললেন। বৈতরণী নদীর বিচিত্র সেতু পার হয়ে মৃত্যুলোকে প্রবেশ করলেন রাম। পথে মৃত্যুর দূতস্বরূপ জ্বর, অজীর্ণ, যক্ষ্মা, বিসূচিকা প্রভৃতি রোগকে দেখলেন রাম। আত্মহত্যারূপী দূতকেও দেখলেন। রৌরব নরকে পাপীদের দুর্দশা দেখে রামের হৃদয় ব্যথিত হল। মৃত রাক্ষস মারীচের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল রামের। কামাতুর পুরুষ ও নারীদের যন্ত্রণা ও পাপের ফল দেখলেন। তারপর উত্তর দুয়ারে অন্যান্য বীরগণকে, পরে বালিকে দেখলেন। পশ্চিম দুয়ারে থাকেন মৃত রাজর্ষিগণ। পিতৃপুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল। দশরথ জানালেন যে হনুমান রাত্রিকাল মধ্যে ঔষধ এনে দিলে লক্ষ্মণ বাঁচবে। রামচন্দ্র অর্ধরাত্রে রণক্ষেত্রে ফিরে এলেন।

নবম সর্গের নাম ‘সংস্ক্রিয়া’। মূল বক্তব্য-মেঘনাদের শ্মশানকৃত্য ও প্রমীলার সহমরণ। কাল তৃতীয় দিবস। রাবণ প্রভাতে জানলেন, লক্ষ্মণ প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। তখন পুত্রের শবদাহের জন্য অনুমতি চেয়ে রাবণ মন্ত্রী সারণকে রামের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। রাম রাবণের প্রস্তাবে সাতদিন যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজী হলেন। পশ্চিম দুয়ার দিয়ে শবযাত্রা বাহির হল। শেষ সম্মান দিবার জন্য রাক্ষস সৈন্যদল চলল। রাম অঙ্গদকে প্রতিনিধি করে পাঠালেন শব যাত্রায়। সমুদ্রতীরে চিতা প্রজ্বলিত হল, প্রমীলা সহমরণে গেলেন। শেষে রাবণ শোকার্ত হৃদয়ে লংকায় ফিরে এলেন। “সপ্ত দিবানিশি লঙ্কা কাঁদিলা বিষাদে।”

আরও পড়ুনঃ