দাঁতের প্লেক কী, কেন হয় এবং করণীয় | Dental Plaque in Bangla

Dental Plaque in Bangla | দাঁতের প্লেক: দাঁত ও মাড়িতে জমে থাকা প্লেক, যা ব্যাকটেরিয়া ও খাদ্যকণার সংমিশ্রণ ৷ এটি দাঁত কিংবা মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে ৷ নিয়মিত দাঁত ব্রাশ বা মুখের স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারণে প্লেক জমতে জমতে শক্ত আবরণ হিসেবে দাঁতে লেগে থাকে, যাকে বলা হয় টারটার বা ক্যালকুলাস ৷ দাঁতের ক্ষয় রোগ, মাড়ির প্রদাহ এমনকি মাড়ির পিরিওডোনটাইটিস সহ অন্যান্য মুখের সমস্যাগুলো এর মাধ্যমে তৈরি হতে পারে ৷ তাই নিয়মিত দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করা এবং বছরে অন্তত দুই বার দক্ষ ডেন্টিস্টকে দেখানো ভালো ৷ এসম্পর্কে আরও বিস্তারিত নিচে দেওয়া আছে ৷

দাঁতের প্লেক কি?

দাঁতের প্লেক কী, কেন হয় এবং করণীয়| Dental Plaque in Bangla

দাঁতের প্লাক হলো ব্যাকটেরিয়ার একটি আঠালো, বর্ণহীন স্টিকি ফিল্ম বা আস্তরণ, যা ক্রমাগত দাঁতে জমা হয়ে তৈরি হয় ৷ দাঁতের প্লেক ব্যাকটেরিয়া, লালা এবং খাদ্য কণার সংমিশ্রনে তৈরি হয় ৷ দাঁতে প্লেক তৈরি হওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার ৷ আপনি যদি নিয়মিত দাঁতের পরিষ্কার এবং প্রতিদিন ব্রাশিং করেন তাহলে এটি দাঁতে জমা হতে পারে না ৷ কিন্তু সমস্যা তখনই হয় যখন দিনে অন্তত দুইবার(সকালও রাত্র) খাওয়ার পর ব্রাশ না করবেন ৷ তখন দাঁতের ক্ষয়, গর্ত, মাড়ির রোগ এবং অন্যান্য মৌখিক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে ।

আরও পড়ুনঃ

  1. দাঁতের মাড়িফুলা সমস্যা এবং করণীয় কি বিস্তারিত ৷
  2. মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ কি বিস্তারিত ৷
  3. আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয় বিস্তারিত ৷
  4. আক্কেল দাঁত ব্যাথা কমানোর উপায় বিস্তারিত ৷
  5. দাঁতের স্কেলিং কি এবং কেন দাঁতের স্কেলিং করতে হয় ৷

দাঁতের প্লেক বা ফলক কি দিয়ে তৈরি?

এতোক্ষনে হয়তো বুজতে পারছেন যে, দাঁতের প্লেক কি? কিন্তু দাঁতের প্লেখ কি দিয়ে তৈরি হয় এবং উপাদানগুলো কি তা হয়তো অনেকেই জানতে চান ৷

দাঁতের উপরিভাগে জমে থাকা প্লেক, যা একটি জটিল বায়োফিল্ম আস্তরণ ৷ যেখানে থাকে ব্যাকটেরিয়া, লালা এবং খাদ্য কণার অবশিষ্টাংশ ৷ আমরা যখন খাবার খাই তখন মুখে বা দাঁতের ফাকে জমে থাকা খাবার(যেমন শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট) ব্যাকটেরিয়া খেয়ে থাকেন ৷ ব্যাকটেরিয়া খাবারকে বিপাক করে অ্যাসিড তৈরি করে, যা দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে ৷

আমরা যদি নিয়মিত সকাল এবং রাত্রে খাওয়ার পর ব্রাশিং না করি, তখন প্লেক জমতে জমতে আরও শক্ত আকার ধারণ করে এবং লালা থেকে ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট নিয়ে টারটার বা ক্যালকুলাসে রূপান্তরিত হয়। তখন আর সাধারণ ব্রাশ বা ফ্লসিংয়ের মাধ্যমে এটি উঠবে না ৷ তখন যেতে হবে একজন ডেন্টিস্টের কাছে ৷

দাঁতের প্লেক দেখতে কেমন হয়ে থাকে?

দাঁতে জমে থাকা প্লেক দেখতে বর্ণহীন ৷ কখনও কখনও খাদ্যকণা প্লেকের সাথে লেগে ফ্যাকাশে হলুদ দেখা যেতে পারে ৷ প্রথম অবস্থায় প্লেক দৃশ্যমান হয় না, ধীরে ধীরে জমা হয়ে এবং সাথে খাদ্যকণা লেগে হলদে আস্তরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে ৷ এভাবে নিয়মিত প্লেক জমা হতে থাকলে একসময় শক্ত আস্তরণ হিসেবে টারটার বা ক্যালকুলাস তৈরি হয় ৷ যার রং হালকা হলুদ থেকে বাদামী রঙের হয়ে থাকে ৷ টারটার, প্লেক থেকে বেশি দৃশ্যমান এবং সহজে চিহ্নিত করা যায় ৷

প্লেগ থেকে টারটার বা ক্যালকুলাসে রুপান্তর

টারটার হলো দাঁতে জমে থাকা শক্ত ফলক বা আস্তরণ ৷ আপনি যদি নিয়মিত মুখের প্লেক পরিষ্কার না করেন তাহলে সেটি ধীরে ধিরে জমে টারটার বা ক্যালকুলাসে পরিনত হবে ৷ তখন আর সাধারণ ব্রাশ বা ফ্লসিং করে এটি দাঁত থেকে আলাদা করা যাবে না ৷ টারটার দাঁত ও মাড়িতে শক্তভাবে লেগে থাকে যা হলুদ বা বাদামী হিসেবে দেখা যায় ৷ তবে খাবার খাওয়ার সাথে সাথে এর রং পরিবর্তন করে ৷ যেমন কফি, চা, ধূমপান এবং পান খেলে রং আরও দৃশ্যমান হয় ৷

সুতরাং মৌখিক সমস্যা থেকে রক্ষা, বিশেষ করে জমে থাকা দাঁতের প্লেগ দূর করতে নিয়মমাপিক দিনে দুই বার খাওয়ার পর ব্রাশ করতে ভুলবেন না ৷ যেন মুখে প্লেগ জমতে না পারে ৷ কেননা প্লেগ থেকেই ধীরে ধীরে টারটারে রুপান্তরিত হয় ৷ তখন হাজার চেষ্টা করলেও একজন দক্ষ ডেন্টিস্ট ছাড়া এটি দূর করতে পারবেন না ৷ এটি দূর করার জন্য তখন দাঁতের স্কেলিং করার প্রয়োজন হতে পারে ৷

দাঁতে প্লেক হওয়ার কারণ কি?

মুখে প্লেগ জমা একটি সাধারণ ব্যাপার ৷ কেননা আমাদের নিয়মিত খাবার খেতে হয় ৷ এতে করে খাবারের ক্ষুদ্রকণা, যা দাঁতের ফাকে লেগে থাকে ৷ যেখানে ব্যাকটেরিয়া খাবারের সাথে মিশে প্লেগ তেরি করে ৷ কিন্তু কথা হলো আমাদের দিনে দুইবার নিয়মিত খাওয়ার পর ব্রাশ করা ৷ তাহলে এই প্লেগ দাঁতে জমতে পারে না ৷

এখন জানবো কি কি কারণে দাঁতে প্লেগ জমে ৷

  • ব্যাকটেরিয়াঃ মুখে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া থাকে ৷ এদের মধ্যে একটি প্রজাতির নাম হলো স্ট্রেপ্টোকক্কাস মিউটান ৷ যারা দাঁতে প্লেগ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • লালা: লালা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির জন্য একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং দাঁতের পৃষ্ঠে ব্যাকটেরিয়া বাঁধতে সাহায্য করে।
  • ডায়েট: শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার ব্যাকটেরিয়ার জন্য জ্বালানী সরবরাহ করে ৷ তাছাড়া মুখের ব্যাকটেরিয়া দুধ, জুস, কোমল পানীয়, রুটি, পাস্তা এবং ফলের মতো চিনিযুক্ত বা স্টার্চযুক্ত খাবারের সাথে মিশে দাঁতের ফলক তৈরি করে ।
  • অপরিষ্কার মুখঃ নিয়মিত সকাল ও রাত্রে খাওয়ার পর ভালোকরে মাউথওয়াশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ না করলে খাবারের সাথে ব্যাকটেরিয়া জমে প্লেগ তৈরি করে ৷
  • ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনঃ নিয়মিত ধূমপান করা এবং পান খাওয়া দাঁতে ফলকের সৃষ্টি করতে পারে ৷

দাঁতে প্লেগ জমার ফলে কী কী সমস্যা হতে পারে?

নিয়মিত মুখের পরিষ্কার করা না হলে দাঁতে প্লেগ জমে ধীরে ধীরে মুখের অন্যান্য মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন ৷ প্লেগ জমার ফলে একজন মানুষ কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  • দাঁতের ক্ষয়রোগঃ জমে থাকা প্লেক(ব্যাকটেরিয়া ও খাদ্যকণা) অ্যাসিড তৈরি করে, যা দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় করতে পারে ৷ একে বলা হয় দাঁতের ক্ষয়রোগ বা ডেন্টাল ক্যারিস ৷
  • মাড়ি ফুলে যাওয়াঃ প্লেক দাঁত ও মাড়ির সাথে লেগে মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি করে ৷ কখনও ব্রাশ করার সময় দেখে থাকবেন মাড়ি লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া এবং রক্তপাত হওয়া ৷ এগুলো মাড়ির প্রদাহ, যা প্লেক জমে হতে পারে ৷
  • পিরিওডোনটাইটিসঃ পিরিওডোনটাইটিস মাড়ির গুরুতর রোগ, যা দাঁতে প্লেক জমার কারণে হতে পারে ৷ এটি হলে দাঁতের চারপাশে ফুলে যেতে পারে, দাঁতের ক্ষয় হতে পারে, ব্যাথা হতে পারে ইত্যাদি ৷
  • মুখের দুর্গন্ধঃ প্লেকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও খাদ্যকণা মিশে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে, যাকে ইংরেজিতে হ্যালিটোসিস বলা হয় ৷
  • টারটার বা ক্যালকুলাস তৈরিঃ দাঁত ও মাড়িতে ক্রমাগত প্লেক জমার ফলে তা শক্ত আবরণে টারটার বা ক্যালকুলাসে রুপান্তরিত হয় ৷ যা সাধারণ ব্রাশ করার ফলে তুলে ফেলা সম্ভব নয় ৷
  • সৌন্দর্য নষ্টঃ দাঁতের ক্যালকুলাস, যা একটি শক্ত হলুদ আস্তরণ ৷ এটি দাঁতের হলুদে রংয়ের পাশাপাশি মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিতে অবদান রাখে ৷ যা মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে ৷

দাঁতের প্লেক কিভাবে দূর করবেন বা দূর করার করণীয়গুলো কি?

  • ব্রাশিং: দিনে অন্তত দুইবার(সকাল ও রাত্রে) খাওয়ার পর নিয়মমাপিক একটি ফ্লোরাইড টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে ৷
  • ফ্লসিং: নিয়মিত ফ্লসিং দাঁতের মাঝখানে এবং মাড়ি বরাবর জমে থাকা প্লেক দূরকরা সহজ হয় ৷ যা সাধারণ ব্রাশ দিয়ে সম্ভব নয় ৷
  • অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ: দাঁত ও মাড়িতে জমে থাকা প্লেক কমাতে এবং কার্যকরভাবে মুখের ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে অ্যান্টিসেপটিক বা ফ্লোরাইড মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন ৷
  • জিহ্বা স্ক্র্যাপার: জিহ্বায় জমে থাকা সাদা ব্যাকটেরিয়া এবং খাদ্যকণা স্তর দূর করতে নিয়ম অনুয়ায়ী জিহ্বা স্ক্র্যাপ করতে পারেন ৷ এটি মুখে ব্যাকটেরিয়ার পরিমান হ্রাস করে ৷
  • সঠিক ডায়েট: চিনিযুক্ত এবং স্টার্চযুক্ত খাবার খাওয়া কমিয়ে দিবেন ৷ কারণ এসকল খাবার দাঁতে প্লেক জমতে অবদান রাখে ৷ সাথে ফল, সবজি এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য খেতে পারেন ৷
  • নিয়মিত ডেন্টিস্ট দেখানঃ বছরে অন্তত দুবার ডেন্টাল চেকআপ এবং দাঁত পরিষ্কার করুণ ৷ একজন দক্ষ ডেন্টিস্ট লেগে থাকা প্লেক এবং টারটার বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার তোলে ফেলতে পারেন ৷

Disclaimer: উল্লেখিত তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং একটি ধারনা নেওয়ার জন্য ৷ এটি কখনই দক্ষ চিকিৎসকের বিকল্প হতে পারে না ৷ তাই দাঁতের যেকোনো চিকিৎসার জন্য একজন দক্ষ ডেন্টিস্টের সরণাপন্য হবেন ৷

5/5(2 votes)
Scroll to Top