SWollen gums in Bangla | দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় কেন এবং করণীয়ঃ মুখের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম কমন একটি সমস্যা হলো মাড়ি ফুলে যাওয়া ৷ দাঁতের মাড়ি বিভিন্ন কারণে ফুলে যেতে পারে ৷ এদের মধ্যে রয়েছে মুখের অপরিচ্ছন্নতা, দুর্বল ওরাল হাইজিন, হরমোনের পরিবর্তন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ভিটামিনের অভাব জনিত কারণ ৷ সর্বোপরি দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয় কি সবকিছু আজকের আর্টিকেলে পেয়ে যাবেন ৷ তবে সমস্যাটির জন্য প্রথমেই একজন দক্ষ ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না ৷ এরকম স্থাস্থ্য বিষয়ক ধারণা পেতে প্রিয়োবিডির সাথেই থাকুন ৷
দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় কেন এবং কারণ কি?
দাঁতের মাড়ি ফোলার সমস্যা আমরা প্রায় শুনে থাকি অথবা আমাদের নিজেরও কখনও হয়েছে কিংবা এখন হচ্ছে ৷ কিন্তু এটি কেন হয়, এমন প্রশ্ন সবারই থাকতে পারে ৷
দাঁতের মাড়ি ফুলার সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে ৷
- মুখের অপরিচ্ছন্নতাঃ নিয়মিত দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার না করার কারণে প্লাক-ব্যাকটেরিয়ার আস্তরণ দাঁত ও মাড়িতে জমা হতে শুরু করে ৷ যার ফলে মাড়িতে প্রদাহের সৃষ্টি হয় ৷
- দুর্বল ওরাল হাইজিনঃ অনেক সময় মুখ ব্রাশ করার ধরুণ দাঁতের মাড়িতে আঘাত হতে পারে ৷ এতে করে মাড়ি ফুলে যেতে পারে ৷
- হরমোনের পরিবর্তনঃ দেহে হরমোনের পরিবর্নের কারণে বিশেষ করে গর্ভাবস্থা, ঋতুস্রাব এবং মেনোপজ হরমোনের ওঠানামার কারণে অনেক সময় মাড়ি ফুলে যেতে পারে ৷
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধ এবং অ্যান্টিপিলেপটিক ওষুধ সেবনের ফলে মাড়িতে প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে ৷
- ভিটামিনের অভাবঃ ভিটামিন সি এর অভাবে মাড়ি ফুলে যেতে পারে ৷ কেননা ভিটামিন সি এর অভাব মাড়ির টিস্যুকে দুর্বল করে দেয় ৷
- ধূমপান এবং তামাক দ্রব্য ব্যবহারঃ তামাকজাত দ্রব্য মাড়িতে রক্ত প্রবাহ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে ৷ যার ফলে মাড়ি ফুলে যেতে পারে ৷
- কিছু সমস্যাঃ ডায়াবেটিস এবং ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতার কারণে কখনও মাড়ি ফুলে যেতে পারে ৷
কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়
কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়? এমন প্রশ্ন অনেকেরই থাকে ৷ বিশেষকরে যারা এ সমস্যায় পড়েছেন ৷ দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া যে ভিটামিনের ঘাটতির কারণে হতে পারে সেটি হলো “ভিটামিন সি” ৷ আমরা অনেকেই জানি ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয় ৷ স্কার্ভি রোগ একটি মাড়ির সমস্যাগত রোগ ৷
আমাদের দেহে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার কোলাজেন সংশ্লেষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷ কেননা কোলাজেন হলো মাড়ির টিস্যুর মূল উপাদান ৷ ভিটামিন সি এর ঘাটতি জনিত কারনে কোলাজেন উৎপাদন কমে যায় ৷ যার ফলে মাড়ির রক্তনালী দুর্বল হয়ে যায় এবং মাড়ি ফুলে যাওয়া, রক্তপাত হয় ৷
এই সমস্যা সমাধানে আমাদের উচিৎ বেশি বেশি সাইট্রাস ফল, স্ট্রবেরি, ব্রকলি খাওয়া ৷ মাড়ি ভালো গঠনে আরেকটি গুরুত্ত্বপূর্ণ পুষ্টি হল ভিটামিন ডি ৷ কারণ এটি ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে এবং দাঁত ও মাড়িকে শক্তিশালী রাখে ৷ তাই এর উৎস হিসেবে সূর্যের আলো এবং ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার(চর্বিযুক্ত মাছ) খাওয়া উচিৎ ৷
আরও পড়ুনঃ
- দাঁতের স্কেলিং কি এবং কেন করবে এবং খরচ কত বিস্তারিত ৷
- মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ কি ৷
- আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয় বিস্তারিত ৷
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয় কি?
দাঁতের মাড়ি ব্যথায় করণীয় হিসেবে আপনি দুটি কাজ করতে পারেন ৷
- চিকিৎসকের সরণাপন্নঃ দাঁতের মাড়িতে ফোলা ভাব, রক্ত ক্ষরণ এবং ব্যাথা যেকোনো কারনে হতে পারে ৷ এর কারণ একমাত্র একজন দক্ষ দাঁতের চিকিৎসক বুজতে পারেন ৷ তাই সবথেকে ভালো হয় ডাক্তারের কাছে যাওয়া ৷ ডাক্তার দেখে-শুনে মুখের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা দিবেন ৷
- ঘরোয়া চিকিৎসাঃ দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং ব্যাথা কমানোর জন্য প্রথমে আমরা ঘরোয়া কিছু প্রদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি ৷ যে পদ্ধতিগুলো করতে একজন চিকিৎসক পরামর্শ দিয়ে থাকেন ৷ আপনি যদি চান ঘরোয়া উপায় কিছু রেমিডির মাধ্যমে দাঁতের মাড়ির ফোলা কমাতে তাহলে পড়তে থাকুণ নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ৷
মাড়ির ফোলাভাব কমাতে ঘরোয়া উপায়
1. মুখের ফুলা কমাতে লবণ পানি দিয়ে গার্গল (Gargle with salt water to reduce swelling in the mouth)
লবণ পানি মাড়ির ফোলা কমাতে কার্যকরি ভূমিকা রাখে ৷ উষ্ণ গরম লবণ-পানি দিয়ে গার্গল করলে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং একই সাথে মাড়িতে ব্যাথা করলে খুব আরাম উপভোগ করবেন ৷ এটি তৈরির জন্য এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে 1/2 চা চামচ লবণ মিশিয়ে বাড়িতে সহজেই তৈরি করে নিতে পারেন ৷ প্রক্রিয়াটি দিনে দুই-তিনবার গার্গল করতে পারেন ৷ লবণ পানি মুখের জীবাণু দূর করতে এবং প্রদাহ কমাতে খুব উপকারী ভূমিকা রাখে ৷
2. ফোলা মাড়িতে হলুদের ব্যবহার (Use of Turmeric in swollen gums)
হলুদ একটি প্রাকৃতিক মশলা, যা এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করার ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে ৷ হলুদে রয়েছে কারকিউমিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট একটি সক্রিয় যৌগ, যা মাড়ির ফোলা ভাব দূর করতে সহায়তা করে ৷ পানির সাথে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে এবং আক্রান্ত স্থানে আলতোভাবে দেওয়া যেতে পারে ৷ কয়েক মিনিট এভাবে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে ৷ এটি দিনে দুবার করা যেতে পারে ৷
3. ফোলা মাড়িতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার(Use of aloe vera gel on swollen gums)
অ্যালোভেরাতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উভয় গুণাগুণ রয়েছে। তবে অবশ্যই খাটি অ্যালোভেরা জেল হতে হবে ৷ ফোলা মাড়িতে অ্যালোভেরা জেল লাগান এবং ৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন, তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফুলা না কমা পর্যন্ত ব্যবহার করুন ৷ অ্যালোভেরা জেল ব্যথায় স্বস্তি দিবে এবং ফোলা কমাতে ভূমিকা রাখে ৷
4. ফোলা মাড়িতে ঠান্ডা সেঁক (Cold compress on swollen gums)
ঠান্ডা সেঁক মাড়ির ফোলা ও ব্যথা কমাতে ব্যবহারিক এবং কার্যকর পদ্ধতি। এটি করা যায় একটি পাতলা কাপড়ে বরফ বা আইচ প্যাক বা বরফ জাতীয় কিছু গালের বাহিরে কিছুক্ষন ধরে রাখলে সেখানে ফোলাজনিত ব্যথা এবং অস্বস্তি থেকে তাৎক্ষণিক রক্ষা পাওয়া যায় ৷ কেননা ঠান্ডা তাপমাত্রা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবেও কাজ করে ৷ তখন স্নায়ুর ক্রিয়াকলাপ হ্রাস করে এবং ফোলাভাব দূর করে ৷
5. ফোলা মাড়িতে টি ব্যাগ (Using tea bags for swollen gums)
চা ব্যাগ বিশেষ করে কালো বা সবুজ চা ব্যাগ গুলো চা তৈরি করার পর ব্যাগটি কিছুক্ষন ঠান্ডা করে ফুলে যাওয়া মাড়িতে প্রায় ১৫ মিনিটের জন্য রাখুন। চাতে রয়েছে ট্যানিন নামক উপাদান, যা মাড়ির ফোলা উপশম করতে ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে ৷ তাছাড়াও ট্যানিনগুলিতে প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাগুণ রয়েছে, যা রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করতে এবং ফোলা কমাতে কার্যকরি ভূমিকা রাখে ৷
6. মাড়ির ফোলাভাব কমাতে তেল ঘষা (Oil rub to reduce gum swelling)
মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতি বিশেষ করে মাড়ির জন্য তেল ঘষা একটি ঐতিহ্যবাহী আয়ুর্বেদিক প্রতিকারগুলোর মধ্যে একটি ৷ এটি করতে নারকেল তেল বা তিলের তেল ব্যবহার করতে পারেন ৷ তেলে রয়েছে প্রদাহবিরোধী এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণাগুন, যা প্রাকৃতিকভাবে মাড়ির ফুলাভাব কমিয়ে মুখের স্বাস্থের উন্নতি করে ৷ এটি করতে এক টেবিল চামচ নারকেল তেল বা তিলের তেল প্রয়োজন ৷ এটি মুখে ১৫-২০ মিনিটের জন্য ঘোরান বা আলতোভাবে ঘষুন ৷ তারপর থুথু করে ফেলে দিন ৷ তেল মাড়িতে ময়শ্চারাইজ করতে এবং টিস্যুর স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে ৷
7. মাড়ির ফোলাভাব কমাতে লবঙ্গের তেল (Clove Oil Beneficial from Gum Swelling in Bangla)
লবঙ্গ তেল শক্তিশালী ব্যথানাশক হিসেবে মাড়ি ফোলার ব্যথা থেকে কিছুটা শান্তি দিবে৷ কেননা লবঙ্গ তেলের রয়েছে ইউজেনল নামক সক্রিয় যৌগ ৷ এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ, যা ফোলাভাব কমানোর জন্য মূল্যবান প্রতিকার হিসেবে কাজ করে ৷ উপাদানটি তৈরি করতে কয়টি লবঙ্গ গুঁড়ো করে সাথে একটু নারিকেল তেলের সাথে মিশ্রিত করে নিতে হবে ৷ তারপর একটি তুলোর বল ব্যবহার করে উপাদনটি প্রদাহ স্থানে লাগাতে হবে ৷ এভাবে কিছুক্ষন রেখে দিন ৷ তারপর ধুয়ে ফেলুন ৷
8. মাড়ির ফোলাভাব কমাতে বেকিং সোডা (Baking Soda Beneficial from Gum Swelling in Bangla)
বেকিং সোডা বা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট মুখে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এবং মাড়ির ফোলা থেকে রক্ষা করে ৷ সামান্য পানির সাথে অল্প পরিমাণে বেকিং সোডা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে ৷ তারপর ফোলা স্থানে আলতোভাবে লাগিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে ৷ পরে ধুয়ে ফেলুন ৷ বেকিং সোডার ক্ষারীয় প্রকৃতি মুখের pH মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে ৷ তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে কয়েকদিন এটি করা যেতে পারে ৷ কেননা এর অতিরিক্ত ব্যবহার দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে পারে।
Disclaimer: উল্লেখিত তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং একটি ধারনা নেওয়ার জন্য ৷ এটি কখনই দক্ষ চিকিৎসকের বিকল্প হতে পারে না ৷ তাই দাঁতের যেকোনো চিকিৎসার জন্য একজন দক্ষ ডেন্টিস্টের সরণাপন্য হবেন ৷