একমাত্র উপজাতি হিসেবে কাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ, বহু বিবাহ ও বিধবা বিবাহ প্রচলিত আছে? [MCQ]

4.7/5(8 votes)

Question: একমাত্র উপজাতি হিসেবে কাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ, বহু বিবাহ ও বিধবা বিবাহ প্রচলিত আছে?

উত্তরঃ C. হাজং

Explanation:- একমাত্র উপজাতি হিসেবে হাজং দের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ, বহু বিবাহ ও বিধবা বিবাহ প্রচলিত আছে

উপজাতিদের বিবাহ

বিবাহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপজাতিতে সাদৃশ্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বৈসাদৃশ্যও। পূর্বরাগ উপজাতীয় বিবাহের মূল সূত্র, তবে তা অবশ্যই প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী হতে হবে। ওরাওঁদের মধ্যে বাল্যবিবাহ এবং চৈত্র, ভাদ্র ও পৌষ মাসে বিবাহ নিষিদ্ধ। বরপক্ষ কনেপক্ষকে পণ দেয়। পাত্রীদেখা, পানচিনি, গায়েহলুদ ইত্যাদি তাদের প্রাকবিবাহ অনুষ্ঠান। বিবাহের দিন উভয় পক্ষের মেয়েরা বিয়ের গীত গায়। ওরাওঁ ও মণিপুরীরা বর্ণাঢ্য বিবাহমণ্ডপ তৈরি করে। ওরাওঁরা এতে মঙ্গলঘট বসায়। মণ্ডপে বর-কনে পরস্পরের কপালে সিঁদুর দেয় এবং উভয় পক্ষের মেয়েরা তখন উলুধ্বনি দেয়। ওরাওঁ ও মণিপুরীদের মধ্যে বিয়ের পূর্বক্ষণে বর-কনে মণ্ডপ প্রদক্ষিণ করে এবং ধান-দুর্বা দিয়ে তাদের বরণ করা হয়।

মণিপুরী বিবাহে মণ্ডপে প্রদীপ জ্বালিয়ে বরকে স্বাগত জানানো হয় এবং একজন কিশোর তার পা ধুইয়ে দেয়। এ সময় কীর্তন আর বাজনা চলে এবং উভয় পক্ষের দুজন মহিলা দুটি টাকি মাছ পানিতে ছেড়ে দেয়। বর-কনের প্রতীক এ মাছ দুটি পাশাপাশি চললে শুভ, অন্যথায় অশুভ। অনুরূপ একটি অনুষ্ঠান গারোদের মধ্যেও প্রচলিত। তারা এক জোড়া মোরগ-মুরগি জবাই করে ছেড়ে দেয় এবং সে দুটি দাপাদাপি করে একত্র হলে শুভ, না হলে অশুভ। অশুভ হলে খামাল (ওঝা) অশুভ দূর করে। বিবাহের শুভ কামনায় অনেক সময় দেবতাকেও ভোগ দেওয়া হয়। বিবাহের পঞ্চম দিনে মণিপুরী কনে প্রথম পিতৃগৃহে আসে। এ উপলক্ষে তখন ভূরিভোজ হয়। উপজাতিদের প্রত্যেক অনুষ্ঠানেই গোত্রের সকলে নিমন্ত্রিত হয় এবং নিমন্ত্রিতরা চাল, মাংস, মোরগ, শূকর, টাকা, মদ ইত্যাদি উপহার দেয়।

মগ যুবক-যুবতীরা নববর্ষ পালন উপলক্ষে ঘনিষ্ঠ মেলামেশার সুযোগ পায় এবং তখন তারা অভিভাবকদের অনুমোদন সাপেক্ষে জীবনসঙ্গী বেছে নেয়। গারো, খাসিয়া, তিপরা ও মগ মেয়েরা বাজারে কেনা-বেচা করতে যায়। এ সুযোগে যুবক-যুবতীদের মধ্যে মনের মিল হয় এবং পরে অভিভাবকদের অনুমোদনক্রমে তাদের বিয়ে হয়। গারো ও মণিপুরীদের মতো সাঁওতাল এবং আরও কিছু উপজাতীয় যুবক-যুবতী একসঙ্গে মাঠে কাজ করার সময় জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়।

চাকমাদের মধ্যে অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও গ্রহণের সময় বিবাহ নিষিদ্ধ। ওরাওঁ, সাঁওতাল, খাসিয়া, গারো এবং মণিপুরীদের মধ্যে গোত্রবিবাহ নিষিদ্ধ। মণিপুরীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় না। গারোদের সমগোত্রীয় যুবক-যুবতীদের মধ্যে থাকে ভাই-বোনের সম্পর্ক। মগদের গোত্রবিবাহ বিধিসম্মত, বরং আন্তঃগোত্রীয় বিবাহ তাদের অপছন্দ। তবে চাচাতো-মামাতো বোন ও খালা-ফুফুকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ।

সাঁওতাল বধূরা স্বামীর গোত্রভুক্ত হয়। স্ত্রী বন্ধ্যা কিংবা পাগল না হলে মগ পুরুষদের পুনর্বিবাহ নিষিদ্ধ, তবে বিধবাবিবাহ সিদ্ধ। ওরাওঁদেরও তাই। গারো মেয়েরা অনেক সময় পছন্দসই যুবককে ধরে নিয়ে বিয়ে করে ঘরজামাই করে রাখে। এরূপ বিবাহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন আর না থাকলেও কোনো কোনো উপজাতিতে স্বেচ্ছায় পলাতক বিয়ে হয় এবং পরে অভিভাবকরা তা অনুমোদন করে। ওরাওঁদের মধ্যে এরূপ বিবাহের প্রাচুর্য দেখা যায়। ওরাওঁ ও সাঁওতাল বধূরা সিঁদুর পরে। উভয় উপজাতির মধ্যেই সিঁদুরের ব্যবহার ব্যাপক। মগ ছাড়া অন্য সব উপজাতির মধ্যে স্বগোত্রে বিবাহ অপমানজনক এবং এজন্য সংশ্লিষ্টদের গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়।

খাসিয়াদের বিয়ে না করা পাপ। স্বামীর নপুংসকতা কিংবা লাম্পট্য, অধিক সন্তান, যৌনস্পৃহা ইত্যাদি কারণে খাসিয়া রমণীরা একসঙ্গে একাধিক স্বামী রাখতে পারে, তবে এরূপ ঘটনা বিরল। অন্য কোনো উপজাতিতে স্ত্রীর একাধিক স্বামী কিংবা উপপতি রাখা কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। খাসিয়া যুবতীরা অনুমোদিত গোত্র থেকে পছন্দসই কোনো যুবককে আমন্ত্রণ করে এনে কয়েকদিন সহাবস্থানের পর সন্তোষজনক মনে হলে উভয় পক্ষের আলোচনাক্রমে তাকে বিয়ে করতে পারে। এদের বিবাহে মহিলারা বরযাত্রী হতে পারে না, কিন্তু ওরাওঁ উপজাতিতে পারে।

মা ও মুরবিবদের আশীর্বাদ নিয়ে পাগড়ি ও ধুতি পরিহিত খাসিয়া বর মাতৃগৃহ ত্যাগ করে। সঙ্গে থাকে বরযাত্রীরা। তাদের বিবাহভোজ হয় ভাত-শুঁটকি দিয়ে, তারপর মদ্যপান। নবদম্পতির মঙ্গল কামনায় দেবতার উদ্দেশ্যে তিন টুকরা শুঁটকির ভোগ দেওয়া হয়। মাতৃতান্ত্রিক খাসিয়া ও গারো উপজাতিতে বর হয় ঘরজামাই। চাকমাদের দু পক্ষের মধ্যে মদ্য বিনিময়ের পর কনের বাড়িতে বিবাহ অনুষ্ঠান হয়। মণিপুরীদের বিবাহবেশ হচ্ছে বরের ধুতি-পাগড়ি ও কপালে চন্দনতিলক, আর কনের পোশাক রাসনৃত্যে গোপিনীদের মতো।

কতিপয় উপজাতিতে তালাক বৈধ্য হলেও তা বিরল। সাঁওতাল এবং ওরাওঁদের মধ্যে তালাক সিদ্ধ, তবে অকারণে তালাক ঘৃণ্য। মনোমালিন্য, যৌন-অক্ষমতা, স্ত্রীর পরকীয়া প্রেম ইত্যাদি তালাকের কারণ। ওরাওঁ, খাসিয়া, চাকমা ও মগদের মধ্যে তালাক বিধিসম্মত হলেও তা কদাচিৎ হয়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বর-কনে উভয়ের এবং গোত্রপতিদের সম্মতিতে তালাক হয়। এজন্য দায়ী ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। চাকমা ও মগদের বিধান হলো, তালাক দেওয়া মায়ের শিশুসন্তান থাকলে তাদের খোরপোষের ভার পিতার।

খাসিয়া সমাজে প্রথমে স্বামী-স্ত্রী কিংবা যে কোনো একজন সংশ্লিষ্ট সমাজপতিকে তালাকের কথা জানায়। তিনি সমঝোতার জন্য তাদের সময় দেন এবং তারা সমঝোতায় ব্যর্থ হলে তালাকের ঘোষণা দেওয়া হয়। তালাকের জন্য দায়ী ব্যক্তি অপর জনকে কিছু জরিমানা দিতে হয়। খাসিয়াদের মধ্যে সাধারণত স্ত্রীর কারণেই তালাক হয়। আর স্বামীর কারণে যদি তালাক হয়, তাহলে তাকে বেত ও জুতা মারা হয় এবং মুখে চুনকালি মাখিয়ে ও মাথা কামিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়। সন্তানসম্ভবার তালাক নিষিদ্ধ। স্বামীর মৃত্যুর এক বছর পর বিধবাবিবাহ সিদ্ধ।

Scroll to Top