কোন প্রযুক্তিটি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সম্পৃক্ত নয়? [MCQ]

Question: কোন প্রযুক্তিটি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সম্পৃক্ত নয়?

উত্তরঃ ক) টেলিগ্রাফ

Explanation:- টেলিগ্রাফ প্রযুক্তিটি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সম্পৃক্ত নয়

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কী?

আধুনিক মানবসভ্যতা তিনটি শিল্পবিপ্লব পেরিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সূচনালগ্নে পা রেখেছে। এক একটি শিল্পবিপ্লব পাল্টে দিয়েছে সারা বিশ্বের শিল্পোৎপাদন, বাজার ও ব্যবসার সমুদয় গতিপথ, পাল্টে দিয়েছে মানবসভ্যতার ইতিহাস ও মানুষের জীবনাচার।

প্রথম শিল্পবিপ্লবটি শুরু হয়েছিল ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে। এরপর ১৮৭০ সালের বিদ্যুৎ আবিষ্কার মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক যুগের সূচনা করে। এর শতবর্ষ পরে ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের আবিষ্কার শিল্পবিপ্লবের গতিকে বাড়িয়ে দেয় বেশ কয়েক গুণ। বর্তমানে শুরু হয়েছে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন নামের একটি নতুন শিল্পবিপ্লব যা আগের তিনটি বিপ্লবকে সব দিক থেকেই ছাড়িয়ে যেতে পারে।

প্রথম শিল্পবিপ্লবে পানিপ্রবাহ ও গতি নিয়ন্ত্রণ করে, বাষ্পশক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনকে যান্ত্রিকীকরণ করা হয়। দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবে বৃহত্তর উৎপাদনে বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। তৃতীয়টি শিল্পবিপ্লবে উৎপাদনকে স্বয়ংক্রিয় করতে ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মূলত তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের ব্যাপক বর্ধিত সংস্করণ, তবে এর রয়েছে বহু স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য। এটি বহু ধারার প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের নতুন ফিউশন, যা বৈশিষ্ট্যগতভাবে শারীরিক, ডিজিটাল ও জৈবিক ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করত এদের আন্তদূরত্ব কমিয়ে আনবে অথবা ক্ষেত্রবিশেষে বিদ্যমান সম্পর্কগুলো আরও জটিল ও অনিয়ন্ত্রিত করে তুলতে পারে।

বিশ্ব এ মুহূর্তে একটি প্রযুক্তিগত বিপ্লবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে আমাদের জীবনযাত্রার, কাজ করার ও পরস্পরের যোগাযোগের পথ ও পদ্ধতিগুলো মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। এই রূপান্তরের মাত্রা ও জটিলতা মানবজাতি আগে যা কিছু করেছে তার তুলনায় তীব্র এবং কিছু ক্ষেত্রে বিপরীতও হতে পারে। এই সমুদয় রূপান্তর-প্রক্রিয়া কীভাবে উদ্ঘাটিত হবে, এগিয়ে যাবে এবং কারিগরিভাবে সম্পন্ন হবে তার সবকিছু আমরা এখনই পুরোপুরি জানি না। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট যে এর প্রতিক্রিয়া নির্ণয়ে অবশ্যই সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণা সংস্থাসহ বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রগুলোর স্টেকহোল্ডারদের ব্যাপকভাবে সমন্বিত করতে হবে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ক্লাউস শোয়াব বলেছেন, আজকের রূপান্তরগুলো কেবলই তৃতীয় শিল্পবিপ্লবকে দীর্ঘায়িত করার পরিবর্তে বরং চতুর্থ ও স্বতন্ত্র এক বিপ্লবের আগমনকেই প্রতিনিধিত্ব করে। এর তিনটি কারণ রয়েছে: শিল্পোৎপাদনের রূপান্তর প্রক্রিয়ার উচ্চ গতিবেগ, অবারিত সুযোগ এবং সর্বব্যাপী সিস্টেমের প্রভাব। প্রভাব। নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোর অভূতপূর্ব ‘ব্রেক থ্রো’ আর এমন অতি উচ্চগতি শিল্পবিপ্লবের ইতিহাসেই নজিরবিহীন।

পূর্ববর্তী শিল্পবিপ্লবগুলো একটি সরলরৈখিক সম্পর্কে বিকশিত হলেও চতুর্থটি অরৈখিক (বা এক্সপোনেনশিয়াল) গতিতে বিকশিত হচ্ছে। তদুপরি, এটি প্রতিটি দেশের প্রায় প্রতিটি শিল্প খাতকে প্রভাবিত, এমনকি ব্যাহত করে ফেলতে পারে। এই পরিবর্তনগুলোর পরিসর এতই ব্যাপক যে তা বর্তমান উৎপাদন ও সার্বিক প্রাসনিক ব্যবস্থাপনার পুরোটাকেই রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবে।

আমরা যে পদ্ধতিতে দৈনন্দিন জীবনযাপন করি, যেভাবে কাজ করি, যেভাবে ব্যবসা ও বাজার ব্যবস্থাপনা করি, যেভাবে অফিস করি, একে অপরের সাথে ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক যোগাযোগ ও লেনদেন করি তার সবকিছুই একটা ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। এই সবকিছুই ইন্টারনেট ও ইন্টারনেটকেন্দ্রিক স্মার্ট ডিভাইস কানেকটিভিটির আওতায় চলে আসবে।

ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে আমাদের চারপাশের সব বস্তু নিজেদের মধ্যে নতুন প্রজন্মের ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটা আন্তসংযুক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে। আমাদের বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাস-ট্রেন, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কলকারখানা ও কর্মস্থলের সর্বত্রই স্মার্ট প্রযুক্তিগুলো ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হবে। এখানে যেকোনো মেশিন, টুলস, অ্যাপ্লায়েন্স সামগ্রী, ইলেকট্রনিক ও মেকানিক্যাল সরঞ্জাম একে অপরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করবে, যেখানে সঞ্চালকের ভূমিকা রাখবে মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেটে সংযুক্ত ডিজিটাল ডিভাইস, স্মার্টফোন ও কম্পিউটারব্যবস্থা।

শিল্পোৎপাদনব্যবস্থায় ‘বিগডেটা’ ও ‘মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম’ তথ্য ও উপাত্তভিত্তিক হিসাব-নিকেশ করত স্বয়ংক্রিয় ও স্বায়ত্তশাসিত সিদ্ধান্ত নেবে। সিদ্ধান্ত তৈরি ও প্রয়োগের এই নতুন ডেটাকেন্দ্রিক প্রক্রিয়াটি সার্বিক ব্যবসা, শিল্প ও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে ধারণা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব প্রতিটি দেশের প্রায় প্রতিটি শিল্পকে বিঘ্নিত কিংবা বিকশিত করার মাধ্যমে প্রভাবিত করছে। যদিও কিছু স্তরে এটি তৃতীয় শিল্পবিপ্লব (ডিজিটাল বিপ্লব) বা কম্পিউটারকরণের একটি বর্ধিতাংশ, তথাপি পরিবর্তনের বেগ ও সুযোগ এবং কানেকটেড সিস্টেমের প্রভাবের কারণে এটি একটি স্বতন্ত্র যুগ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।

পুনঃপুনঃ হিউম্যান ইনপুট দিতে হয় এমন শ্রমশক্তির কাজে রোবট ব্যবহার এখন খুব সাধারণ ঘটনা। স্বল্পদক্ষ শ্রমিক, একই কাজ পুনঃপুনঃ করা শ্রমিক, ক্যাশিয়ার, ট্রাকচালক, বিভিন্ন পরিষেবা খাতের কল সেন্টার, টেকনিক্যাল রিপোর্টিংয়ের কাজ, দূরনিয়ন্ত্রণ, সার্ভেইল্যান্স, কারখানার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, যেকোনো বিপজ্জনক কাজ, নির্মাণ শ্রম, কিংবা নিরাপত্তা প্রহরী বা গৃহস্থালির কাজ ইত্যাদি সব কাজেই রোবট মানব শ্রমিকের স্থান দখল করতে শুরু করবে।

এতে করে শ্রম খরচ ও মানবিক ত্রুটি উভয়েই কমে আসতে পারে। তবে যেসব কাজের জন্য মানবিক সহানুভূতি, বোঝাপড়া ও নৈতিক বিচারের প্রয়োজন, যেমন বিচারক, নার্স, শিক্ষক, পুলিশ ইত্যাদি খাতে চাকরি হারানোর ভয় কিছুটা কম। আবার রোবটিক উদ্ভাবন, নকশাকরণ, রোবট পরিচালনা, নেটওয়ার্ক সাপোর্ট ইত্যাদি কারিগরি খাতে অতি দক্ষ ও দক্ষ মানবসম্পদের কর্মসংস্থান ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। তবে চাকরি হারানোর বিপরীতে নতুন চাকরি তৈরির সামঞ্জস্য কতটুকু বজায় রাখা যাবে তার জন্য রাষ্ট্রীয় নীতি-পরিকল্পনাকে উপলব্ধির গভীরে পৌঁছাতে হবে।

মোবাইল ও স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে উদীয়মান প্রযুক্তির অভূতপূর্ব প্রক্রিয়াজাতকরণ মতা, সংরক্ষণ ক্ষমতা ও অবারিত তথ্যপ্রবাহে কোটি কোটি মানুষের সংযুক্ত হওয়ার সীমাহীন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

ইতিমধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারিক প্রয়োগ আমাদের চারপাশের বহু কারিগরি ব্যবস্থাপনায় ছড়িয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট মার্কেটিং, ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজি (ফিনটেক), ডেটা মাইনিং অ্যালগরিদম, ব্লকচেইন, বহু খাতের ইঞ্জিনিয়ারিং অপারেশন, অত্যাধুনিক টেলিকম ইউজ কেইস, চালকবিহীন স্বচালিত গাড়ি, ড্রোন থেকে শুরু করে ভার্চুয়াল জগতের সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট ও বিনিয়োগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটের ব্যাপক ব্যবহার বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাবিত অগ্রগতি হয়েছে।

কম্পিউটার ও স্মার্ট ডিভাইসগুলোর কম্পিউটিং ক্ষমতা অভূতপূর্ব বিকাশ পেয়েছে: ফলে বিপুল পরিমাণে তথ্য-উপাত্ত ও স্যাম্পল ডেটা প্রসেসিংজাত স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত দ্বারা চালিত হচ্ছে। ইন্টারনেটে সার্চ ইঞ্জিনভিত্তিক পণ্য বিপণনে ইতিমধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ব্যাপকতা পেয়েছে। ইন্টারনেটে জীবন সাজানোর দৈনন্দিন বিলাসবহুল পণ্য এবং জীবন বাঁচানোর ওষুধ খোঁজা থেকে শুরু করে আমাদের বিনোদন ও সাংস্কৃতিক আগ্রহের (ডেটা মাইনিং) পূর্বাভাস দেওয়ার জন্যও সফটওয়্যার অ্যালগরিদম ব্যবহৃত হচ্ছে।

ডিজিটাল বিপ্লবের এই শক্তির চিত্রটি বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘ডিজিটাল ডিভিডেন্ডস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন মাত্র এক দিনে বিশ্বে ৩০ হাজার কোটি ই-মেইল পাঠানো হয়, গুগলে ৪২০ কোটি বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করা হয়। এক যুগ আগেও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন ছিল অকল্পনীয়। ডিজিটাল বিপ্লব সম্পর্কে বহুজাতিক মোবাইল অপারেটর ডিজিসেলের চয়ারম্যান ডেনিস ও ব্রায়েন বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হিসেবে ডিজিটালাইজেশন আমাদের কাজের সব ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, তবে এই পরিবর্তনকে আমি দেখি সূচনা হিসেবে। আগামী ১০ বছরে ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে আমরা এমন সব পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি, যা এর আগে ৫০ বছরে সম্ভব হয়নি।’

Related Questions:-