নবান্ন নাটক কত সালে প্রকাশিত হয়? [MCQ]

5/5(3 votes)

[Question] নবান্ন নাটক কত সালে প্রকাশিত হয়?

(ক)১৯৪৪ সালে
(খ)১৯৪৬ সালে
(গ)১৯৪৭ সালে
(ঘ)১৯৪৮ সালে

উত্তরঃ (ক) ১৯৪৪ সালে ৷


সংক্ষেপে ব্যাখ্যাঃ

বিজন ভট্টাচার্য রচিত নবান্ন নাটক ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত হয় ৷

বিজন ভট্টাচার্যের বহুল খ্যাত নাটক হলো নবান্ন। এটি ১৯৪২ সালের বিপ্লব এবং ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরের বাস্তব কাহিনী নিয়ে রূপায়িত। ১৯৪২ সালে গণঅভ্যূত্থান আরম্ভ হয়। ব্রিটিশ শাসকরা তাদের শেষ চেষ্টা করে তাদের স্বার্থ রক্ষায়, হিংস্র হয়ে ঝাপিয়ে পড়ে ভারতের বুকে। বাংলায় যুদ্ধের এ অবস্থায় বিপজ্জনক অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া ঘটে। সৈনিক আর উদ্বাস্তুতে ভারত প্রদেশ ভরে যায়। সে সময় রাজনৈতিক আন্দোলন তীব্র হয়। মেদিনীপুট জেলার তমলুক ও কাঁথি মহকুমায় আন্দোলন বিশেষভাবে জঙ্গিরূপ ধারন করে। বিদেশি দ্বারা আক্রমনের আঘাতস্থলের এমন একটি অঞ্চলের বিপ্লব বাংলার সরকার সহ্য করতে প্রস্তুত ছিলো না। এতে করে বিপ্লবীদের দমন করতে সৈন্যবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর ইউনিট ছড়িয়ে পরে। অকাতরে মারা যায় মানুষ। এবং ব্যপক হারে গ্রেফতার হয়।

সরকারি সৈন্যরা গ্রামের নারীদের ধর্ষণ করে, লুটপাট ও করে। গ্রামের প্রধান সমাদ্দার দুই পুত্র এই যুদ্ধের শিকার। প্রধান বলে, সে প্রাণ দিবে তবে শত্রু কে দূর করবে। তার ভাতিজা কুঞ্জ ভয় পেলেও সে এগিয়ে যেতে চায়। এমন কি তার কথা হলো, পুরুষ রা থাকতেও কেন নারীরা জঙ্গলে গিয়ে লুকাবে। পালিয়ে বেড়ানোকে প্রধান ও তার স্ত্রী কেউ পছন্দ করে না। তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়। যুধিষ্ঠির এর কথায়-যারাই তাদের পথে বাধা হবে। তাদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এই জয় আনতে গিয়ে পঞ্চাননী প্রান দেয়, কিন্তু মান দেয় নি। নাটক শুরু হয়ে মেদিনীপুর এর প্রতিরোধ দিয়ে। সেখানের কৃষক রা তাদের ধান পুড়িয়ে ফেলে সরকার কে ধান দিবে না বলে। বাংলা১৩৫০ এর মন্বন্তর শুরু হয়।

দেখা দেয় সাইক্লোন। বন্যায় ভেসে যায় সব। দেখা দেয় খাদ্য সংকট। ডুমুর, কলা, সিদ্ধ কচু এসব একসময় শেষ হয়ে যায়। শুরু হয় মানুষের মৃত্যু চিত্র। গ্রাম ছেড়ে তারা শহরে যাবে তাই দালাল দের কাছে তারা জমি বিক্রি করে। নাটকের প্রধানও দালাল হারুদত্ত এর কাছে জমি বিক্রি করে। কুঞ্জ বাধা দেয়। হারুদত্ত শুধু জমির দালালি করে না। সে যুবতী নারীদের চালন করে শহরে কালীধনের কাছে। আর সে বিভিন্ন সেবাশ্রম নামে নারী ব্যবসায় মেতে উঠে।

এ পর্যায়ে আসে দ্বিতীয় ধাপ। শহরে তো আর এমনি এমনি খাবার জুটে না। তার চিত্র তো কুঞ্জ কে দেখেই বুঝতে পারা যায়। নাট্যকার কলকাতাকে দুর্ভিক্ষ আর মন্বন্তের শহর পরিণত হবার চিত্র আঁকেন। গাছের ছায়ায় মাটির উপর মৃতদেহ পচে। মুখের উপর মাছির ঝাঁক। কেউ সেদিকে দৃষ্টি দেয় না। এমন লাশ কলকাতার ব্যস্ততম রাজপথ লোয়ার সার্কুলার রোডের ফুটপাতে, শেয়ালদা স্টেশনের উল্টা দিকে। ক্যামেরা নিয়ে সাংবাদিক ভিখেরি মা-শিশুর ছবি, হাড় জিড়জিড়ে বৃদ্ধের ছবি তুলে পত্রিকার ব্যবসাকে রমারম করে তুলে।

নাটকে তার চিত্র আছে প্রধান সমাদ্দার কে নিয়ে। ভদ্রলোকেরা খোলা বাজারে চাল পায় না। দুর্ভিক্ষে সারা দেশ ছেয়ে গেছে। কিন্তু চোরাবাজারে সবই মিলে। এমন দিনে কালোবাজারিতে হাজার খানেক মানুষ দাওয়াত করে খাওয়াতে দেখা যায়। ১৯৪২ সালের বিপ্লব আর মন্বন্তরে বাস্তব অভিজ্ঞতার ফসল এই নাটক। এই নাটকের অভিনেত্রী বলেছেন, “যে মানুষেরা রাস্তায় দুর্ভিক্ষের মড়া দেখে মুখ ফিরিয়ে গেছে নবান্ন নাটক দেখিয়ে সেই মানুষদের চোখে আমরা জল ঝরাতে পেরেছি।” একথা বলার পর আর অনুভূতি প্রকাশ এর দরকার পড়ে না। প্রধান এর কথা-“কুঞ্জ, কুঞ্জ আমি প্রাণ দেব রে। জন্তু জানোয়ারের মতো পালিয়ে বাঁচা! তুই আমারে ছেড়ে দে। আমার অন্তর জ্বলে গেছেরে কুঞ্জ।” পালাতে গিয়ে রক্ত ঝড়লে সে বলেছে- “এ রক্তের আর দাম! এ রক্তের আবার মায়া!” নাটক শুরু হবার আগে থেকে সে যন্ত্রণাদ্বগ্ধ! নাটকেও তার যন্ত্রনার শেষ নাই। শেষে কি স্বস্তি মিলেছিলো…!

আরও পড়ুনঃ