শাহনামা গ্রন্থের রচয়িতা কে? [MCQ]

5/5(3 votes)

[Question] শাহনামা গ্রন্থের রচয়িতা কে?

(ক)সবুক্তগীন
(খ)ফেরদৌসী
(গ)জামী
(ঘ)রূমী

উত্তরঃ (খ) ফেরদৌসী


সংক্ষেপে ব্যাখ্যাঃ

শাহনামা গ্রন্থের রচয়িতা হলেন ফেরদৌসী ৷

ইরানের জাতীয় মহাকাব্য- তাঁদের ভাষায়, ‘শাহনামে’ আমরা বলি শাহনামা। নাম থেকেই বোঝা যায় এটি রাজাবাদশাহদের কাহিনি। এই সৌধপ্রতিম মহাকাব্যটি রচনা করেন ইরানের মহাকবি ফেরদৌসী, আনুমানিক ৯৭৭ থেকে ১০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। কোনো কোনো গবেষক অবশ্য আরও সুস্পষ্ট দিন-তারিখ নির্ধারণ করে বলেছেন, ‘ফেরদৌসী এই অবিস্মরণীয় মহাকাব্য রচনা শুরু করেন ৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে এবং শেষ করেন ৮ই মার্চ ১০১০ খ্রিস্টাব্দে’।

শাহনামা ষাট হাজার পঙ্ক্তির বিশাল ও অমূল্য রত্নপ্রতিম গ্রন্থ। ২০১০ সালে এ গ্রন্থের সহস্রবর্ষ পূর্ণ হলেও সারাবিশ্বে এর আবেদন এখনো একটুও কমেনি। শাহনামাকে বলা যায়, মহৎ কবিতা এবং জাতীয় ইতিহাস পুনর্নির্মাণচর্চার একটি তুলনারহিত সৃজন। কারণ, এতে ইরানের প্রাচীন ইতিহাসের একটি অনুপুঙ্খ কাব্যিক পুনর্নির্মাণই ছিল কবির অভীষ্ট লক্ষ্য। এ ধরনের কাজে পূর্বসূরিদের প্রয়াসকে গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে নবরূপ দিতে হয়। ফেরদৌসী ইতিহাসের দিকে চোখ রেখে সৃজনপটু দক্ষতায় সে কাজ সম্পন্ন করেছেন। এই কাব্যগ্রন্থের একটি অংশ ফেরদৌসীর স্বকীয় সৃজন-উৎস থেকে উদ্ভাবিত। অন্যদিকে, সমকালীন গদ্য লেখকদের, বিশেষ করে আবু মনসুর দাকিকির (Abu Mansur Daqiqi) রচনাকে তিনি বেছে নেন বীজসূত্র হিসাবে, বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করেন।

শাহনামার ইতিহাস পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে সপ্তম শতাব্দীতে পারস্যে ইসলামের বিজয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত। শাহনামা প্রধানত ইরানের পৌরাণিক, বীরত্বব্যঞ্জক এবং ঐতিহাসিক যুগসমূহের কীর্তিগাথাকে সমন্বিত করে বিশাল প্রেক্ষাপটে মানবিক আবেদন এবং শাশ্বত মূল্যচেতনাঋদ্ধ মহৎ সাহিত্যিক মাস্টার পিস। শাহনামা ইরানের জাতিতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয় এবং ইতিহাসের কালক্রমিক অভিযাত্রায় তুর্ক- মুঘলসহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জাতি-পরিচয়কেও ধারণ করেছে। এ বিবেচনায় এটি বহু- সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করা এক বিশ্ব-মহাকাব্যেরই অন্তর্ভুক্ত।

শাহনামার কাহিনিসূত্র শুরু হয়েছে মধ্যযুগের উপান্তকালের ফারসি বা পাহলভি ভাষায় রচিত Xataynam ak (Book of Kings) থেকে। এটি মূলত পারস্যের কিংবদন্তিকালের কাহিনি থেকে শুরু হয়ে দ্বিতীয় Khosrau’র (590-628) বহুমুখী ধারাপ্রবাহ সতর্কতার সঙ্গে অনুধাবন করবেন এবং রাজা-রাজবংশ-ব্যক্তি বা কোনো রাষ্ট্রের কেন পতন ঘটে তা-ও তাঁর এই মহৎ গ্রন্থ থেকে বুঝে নেবেন। এবং এর মধ্য দিয়ে বিশ্বসভ্যতার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে একটি নতুন পৃথিবী নির্মাণে প্রয়াসী হবেন। তিনি যে জায়গাটায় জোর দিয়েছিলেন তা হলো এই পৃথিবী চলমান এবং এই পৃথিবীতে মানুষ ইতিহাসের পথে যুগযুগান্তের পথপরিক্রমায় আসে আর যায়। সেজন্যই তাদের বিজ্ঞতার সঙ্গে নিষ্ঠুরতা, মিথ্যাচার এবং সমস্ত অশুভ কল্পনা বর্জন করে সুবিচার, সত্য, ন্যায়, শৃঙ্খলা এবং অন্যান্য গুণ অর্জন করে বিশ্বসভ্যতায় তার ছাপ রেখে যাবে।

আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে শাহনামার একটি পাণ্ডিত্যপূর্ণ সংকলন প্রকাশিত হয় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে। এটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন টি. ম্যাকান। সতেরটি পাণ্ডুলিপির তুলনামূলক যৌগিক সম্পাদনার মাধ্যমে এটি প্রস্তুত করা হয়। ফ্রান্স, রাশিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে শাহনামার বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ সংকলন প্রকাশিত হলেও ভারতবর্ষের অন্য কোনো অঞ্চলে এর পূর্ণাঙ্গ, সুসম্পাদিত সংকলনের খবর আমরা পাইনি। তবে মুঘল সম্রাটরা এ বইটি গুরুত্বের সঙ্গে পড়তেন তার প্রমাণ আছে বাবর, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান প্রমুখের শাহনামার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে।

প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর শাহনামা থেকে কিছু পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করেছিলেন। বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁও শাহনামা পাঠ করে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন এমন সংবাদ জানা যায়। বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে শাহনামা বিষয়ে কোনো কোনো বই প্রকাশিত হলেও এই মহাগ্রন্থের কোনো সম্পূর্ণ সংকলন ইতঃপূর্বে প্রকাশিত হয়নি। সে দিক থেকে বাংলা একাডেমী এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। এই বইয়ের পূর্ণাঙ্গ সংকলন বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করায় একাডেমীর সাবেক পরিচালক সৈয়দ আলী আহসানের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

রিপোর্ট করুন

“আমরা(Priobd.com) সকল তথ্য সঠিক দেওয়ার জন্য সর্বদা চেষ্ঠা করেছি ৷ আপনার যদি মনে হয় এই আর্টিকেলে কোনো তথ্য ভুল হয়েছে, দয়া করে প্রশ্নসহ যে অংশটি ভুল হয়েছে তা উল্লেখ করে আমাদের জিমেল করুণ”
Gmail: [email protected]