সংস্কৃতির ভাঙা সেতু গ্রন্থের রচয়িতা কে? [MCQ]

5/5(3 votes)

[Question] সংস্কৃতির ভাঙা সেতু গ্রন্থের রচয়িতা কে?

(ক)আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
(খ)মাযহারুল ইসলাম
(গ)নীলিমা ইব্রাহীম
(ঘ)হায়াৎ মামুদ

উত্তরঃ (ক) আখতারুজ্জামান ইলিয়াস


সংক্ষেপে ব্যাখ্যাঃ

সংস্কৃতির ভাঙা সেতু গ্রন্থের রচয়িতা হলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ৷

বই থেকে কিছু অংশঃ

সংস্কৃতি নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ‘আজকালি বড়ো গোল’ দেখা যায়। প্রতিপক্ষ ছাড়া কোনো তর্ক তেমন জমে না, সংস্কৃতি-বিষয়ে কথাবার্তায় একটি শত্রুপক্ষ জুটে গেছে, এই শত্রুবরের নাম ‘অপসংস্কৃতি’। শহর এলাকায় তো বটেই, নিম-শহুরে জায়গাগুলোতেও সচ্ছল, এমনকী নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা রংবেরঙের নানারকম রম্য পত্রিকা, টিভি, ফিল্ম ও ভিসিআরের কল্যাণে অপসংস্কৃতির চর্চা প্রাণভরে দেখে এবং নিজেদের জীবনে তার যথাযথ প্রয়োগের জন্য একনিষ্ঠ সাধনা চালায়। এই সাধনা আবার বিনা খরচায় হয় না, এর জন্য পয়সার দরকার।

সদাপরিবর্তনশীল কাটছাঁটের কাপড়চোপড়, স্টিকার, চেন ইত্যাদি তো বটেই, কোকাকোলা থেকে শুরু করে মদ, গাঁজা, চরস, ক্যামেরা, টেপরেকর্ডার, টিভি, ভিসিআর, হোন্ডা, গাড়ি-যে যেমন পারে-প্রভৃতি উপাদান ছাড়া এই সাধনা অব্যাহত রাখা বড় কঠিন। এখানে ক’টা বাপ-মা আছে যারা নিয়মিত এসবের জোগান দিতে পারে? তা সে-ব্যাপারেও সাহায্য করার জন্য আমাদের টিভি ও সিনেমাওয়ালারা সদাপ্রস্তুত। হাইজ্যাক, চুরি, ডাকাতি, মারামারি, লম্ফঝম্প প্রভৃতির ছবি দেখিয়ে যুবসম্প্রদায়কে এরা অর্থসংগ্রহের শর্টকাট পথ রপ্ত করার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এতে পয়সা কামানো চলে, অন্যদিকে পয়সা কামাবার পদ্ধতিটাও ঐ ধরনের সংস্কৃতিচর্চার অবিচ্ছিন্ন অংশ।

এইভাবে earn while you learn-কর্মযোগে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুবসম্প্রদায়ের একটি অংশ একই সঙ্গে অর্থোপার্জন ও সংস্কৃতিচর্চা দুটোতেই সমান পারঙ্গম হয়ে উঠেছে। অর্থাগম হচ্ছে দেখে এদের ‘রক্ষণশীল’ বা ‘রুচিশীল’ বাপ-মাও চুপচাপ থাকাটাকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে করেন। কারণ কোনো কোনো কর্তব্যপরায়ণ পুত্র তাদের উপার্জিত অর্থের খানিকটা বাড়িতেও ঢালে। এ ছাড়া, এইসব যুবকের অনেকের মধ্যে আজকাল ধর্মচর্চার প্রবণতাও দেখা যায়। সব ওয়াক্ত নামাজ পড়ার সময় না-পেলেও শুক্রবার এরা মসজিদে যায়, মহা ধুমধাম করে ঈদ-শবেবরাত করে, পিরের পেছনে অকাতরে টাকা ঢালে, তাবিজ নেয়, সুলক্ষণা পাথর কেনে এবং মাজার দেখলেই সেজদা দেয়।

এইসব দেখে পরহেজগার বাপ- মা বেশ তৃপ্ত-না, যে যা-ই বলুক, চুরি-ছ্যাঁচরামি, হাইজ্যাক, ডাকাতি যা-ই করুক, মদ-গাঁজা যতই টানুক, কিন্তু ছেলের আমার ধর্মে মতি আছে; পিরের তেজে এইসব উপসর্গ একদিন ঝরে পড়বে, ততদিনে ঘরে দুটো পয়সা আসছে আসুক, ছেলের কল্যাণে বাপ-মাও জাতে উঠতে পাচ্ছে, এটাই-বা কম কী?

সমাজের অগ্রসর অংশ বলে এই নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অনুশোচনার অন্ত নেই। অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাঁরা এতই সোচ্চার যে এটাকে তাঁরা বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির পবিত্র গোদুগ্ধের ভাঁড়ে বিপুল পরিমাণ গোচোনা বলে ঠাহর করে ফেলছেন। তাঁদের কাছে আমাদের সংস্কৃতিচর্চার প্রহ্লাদকুলে একমাত্র দৈত্য হল অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতি প্রচারের দুর্জয় ঘাঁটি টেলিভিশন পর্যন্ত এই নিয়ে আফশোস করার জন্য তাঁদের হায়ার করতে শুরু করেছে।

আমাদের কোনো কোনো বীরপুরুষ বুদ্ধিজীবী টেলিভিশনের পর্দায় অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে চাপাবাজি করে দুটো পয়সা ও নাম কামাতে এতটুকু পেছপা হচ্ছেন না। এখন ক্যান্টনমেন্ট যেমন গণতন্ত্র বিতরণের দাতব্য কেন্দ্র, দরিদ্র ও শূদ্র দেশবাসীকে খাঁটি নির্জলা গণতন্ত্র সরবরাহের হুংকার শোনা যায় সেখানে থেকেই, নানারকম লম্ফঝম্প, ছ্যাবলামো, ভাঁড়ামো ও ইয়ার্কির ফাঁকে ফাঁকে, টেলিভিশনে তেমনি ঘোষিত হয় সুস্থ সংস্কৃতিপ্রচারের সংকল্প। তো সিনেমাই-বা বাদ থাকে কেন?

ঢাকায় এখন ধর্মভাবদীপ্ত ফাইটিং ছবি তৈরির মড়ক চলছে। ভরসা করি, এমন ছবির মহড়া নিশ্চয়ই চলছে যেখানে কুক্ষু বা কারাতে-পটু বাঙালি- সংস্কৃতিচর্চায় নিবেদিতপ্রাণ কোনো বাহাদুর পিরের পড়া-পানি সেবন করে তার আঁটোসাঁটো প্যান্ট-গেঞ্জি-পরা প্রেমিকাকে বুকে জড়িয়ে ‘দম-মওলা’ বলে একটা হাঁক ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে ‘অপসংস্কৃতি’-নামক দানবের ওপরা ৷..[পুরো বইটি পড়ুন]

পরিশেষে, সংস্কৃতির ভাঙা সেতু গ্রন্থের রচয়িতা হলো আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ৷

রিপোর্ট করুন

“আমরা(Priobd.com) সকল তথ্য সঠিক দেওয়ার জন্য সর্বদা চেষ্ঠা করেছি ৷ আপনার যদি মনে হয় এই আর্টিকেলে কোনো তথ্য ভুল হয়েছে, দয়া করে প্রশ্নসহ যে অংশটি ভুল হয়েছে তা উল্লেখ করে আমাদের জিমেল করুণ”
Gmail: [email protected]