[Question] হুমায়ুন নামা গ্রন্থের রচয়িতা কে?
(ক) | আবুল ফজল |
(খ) | গুলবদন বেগম |
(গ) | গুলতেকিন |
(ঘ) | হুমায়ুন আহমেদ |
সংক্ষেপে ব্যাখ্যাঃ
হুমায়ুন নামা গ্রন্থের রচয়িতা হলেন গুলবদন বেগম ৷
পাক-বাংলা-ভারত উপমহাদেশে মোগল শাসনের ইতিহাসের এক-গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় জুড়ে রয়েছেন সম্রাট হুমায়ুন। সম্রাট বাবুর এদেশে মোগল শাসনের যে প্রথম ভিত্তি রচনা করেন, সম্রাট হুমায়ুন সে ভিত্তিকেই সুদৃঢ় ও সুবিস্তৃত করেন। কেমন করে তিনি তা করলেন তারই সংগ্রামমুখর আখ্যানভাগ বিধৃত হয়েছে এই গ্রন্থে। ইতিহাসবেত্তারা জানেন, হুমায়ুন তাঁর শাসনকে সুদৃঢ় ও বিস্তৃত করার জন্য জীবনের সিংহভাগ যুদ্ধবিগ্রহ করে কাটিয়েছেন শেরশাহ ও তাঁর নিজের ভাইদের (মুখ্যত মির্জা কামরান) সাথে।
কিন্তু সেসব প্রাসাদচক্রান্ত ও যুদ্ধবিগ্রহ ইতিহাসের পাতার চাইতে আরো অন্তরঙ্গ ও সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে এই গ্রন্থে। হুমায়ুন নামা কোনো ঐতিহাসিকের লেখা নয়, সম্রাট বাবুরের সুযোগ্যা কন্যা গুলবদন বেগম অনেকটা স্মৃতিকথা বা ডায়েরি-নির্ভর লেখার ধাঁচে বর্ণনা করেছেন এই ঘটনাবলি। ফলে, এই গ্রন্থে ঐতিহাসিক উপাদানের যেমন বিপুল সমাবেশ ঘটেছে, তেমনি রয়েছে এতে মোগল-পরিবারের গল-পরিবা শাহজাদা ও ললনাদের অন্তরঙ্গ ঘরোয়া চিত্র।
মূল ফারসিতে রচিত এই ঐতিহাসিক দলিলগ্রন্থ হুমায়ুন নামার প্রথম ইংরেজি অনুবাদ করেন মিসেস এনিটা বিউরেজ। উর্দুতে এই গ্রন্থের একাধিক সংস্করণ বেরিয়েছে, তন্মধ্যে রশিদ আক্তার নদভী-কৃত অনুবাদ বেশ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাভাষায় এই গ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ সম্ভবত এ-ই প্রথম। রচনাশৈলীর সাথে আধুনিক অনুবাদকের যে দ্বন্দ্ব প্রায়শ জটিলতার সৃষ্টি করে থাকে, হুমায়ুন নামার বেলায় তা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। আধুনিক অনুবাদের মুখ্য তাগিদ হচ্ছে মূল গ্রন্থের আসল বক্তব্যটুকু পাঠকদের কাছে উপস্থাপিত করা। কিন্তু হুমায়ুন নামা এমন একটি ফারসি রচনা যার শুধুমাত্র বক্তব্যটি গ্রহণ করলেই দায়মুক্ত হওয়া যায় না। প্রাচীন ও ঐতিহাসিক রচনার গুরুত্বের প্রেক্ষিতে হুমায়ুন নামার বাংলা অনুবাদে মূল রচনার আসল মেজাজ, ভাষালংকারের বাহুল্য এবং অতিরঞ্জন ও অতিকথন এড়িয়ে যেতে পারি নাই। কেননা, তাতে আমরা হুমায়ুন নামার প্রকৃত আড়ম্বর ও আভরণের সাথে পরিচয় লাভ করতে পারব না। তাই পাঠকদের ধৈর্যচ্যুতি সম্পর্কে সচেতন থেকেও যথাসম্ভব মূল রচনার গতিধারা ও মেজাজকে সঞ্জীবিত রাখার চেষ্টা করেছি।
হুমায়ুন নামার অনুবাদকর্ম ১৯৭১ সালে শুরু করার পর স্বাধীনতাযুদ্ধ ও নানা কারণে আর সমাপ্ত করতে পারি নাই। প্রথমদিকে এর কিছু অংশ ‘দৈনিক আজাদ’-এ ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিল। পরে ছিয়াত্তর সালের জুন মাসে চূড়ান্তভাবে এই কাজ শেষ করতে সমর্থ হই। হুমায়ুন নামা অনুবাদের ব্যাপারে প্রত্যক্ষভাবে আমাকে যাঁরা উৎসাহিত করেছেন তন্মধ্যে শ্রদ্ধেয় জনাব আবু জাফর শামসুদ্দিন, জনাব মুজীবুর রহমান, বন্ধুবর হাসান গোফরান, শ্রদ্ধেয় পিতা মওলানা শামসুল হক কুফী ও ওস্তাদ মওলানা আবদুর রহমানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
Also Read More:—